লক্ষ্মী আসছেন ঘরে ঘরে, কে জেগে আছ?
‘বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে,
জীবনানন্দ দাস পেঁচাকে নিয়ে লিখেছেন তিনটে আস্ত কবিতা। কবির বিভিন্ন কবিতায় লক্ষ্মীর এই বাহনের উল্লেখ আছে অন্তত আটত্রিশ বার। অনান্দনিক এই পাখি কবির কাছে হয়ে উঠেছে নান্দনিক, ধনসম্পদের বার্তাবাহী।
লক্ষ্মী হিন্দু দেবী। ধনসম্পদ, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী। বিষ্ণুর পত্নী, অপর নাম মহালক্ষ্মী। বাহন পেঁচা। কিন্তু যিনি সৌন্দর্য ও সৌকর্যের প্রতীক, তাঁর বাহন কেন পেঁচা? আসলে ধান বাঙালির কাছে লক্ষ্মী। ধানের শত্রু ইদুরকে খায় পেঁচা। রাতে পুজো হয় লক্ষ্মীর, তাই রাতজাগা পাখিই তাঁর বাহন। এভাবে পেঁচাই লক্ষ্মী হয়ে উঠেছে আমাদের কাছে, ইঁদুর অলক্ষ্মী।
কীভাবে পেঁচা হয়ে উঠল লক্ষ্মীর বাহন?
কথিত আছে, দুর্বাশা মুনির অভিশাপে ইন্দ্রকে শ্রীহীন করে সমুদ্রে বসবাস শুরু করেন লক্ষ্মী। পরে সমুদ্র মন্থনের সময় উত্থিত হন এবং বাহুলগ্না হন বিষ্ণুর। বিষ্ণু যখন আদিত্য, লক্ষ্মী তখন পদ্ম। বিষ্ণু যখন পরশুরাম, লক্ষ্মী তখন পৃথিবী। ক্ষণে ক্ষণে লক্ষ্মী যেমন নিজেকে বদল করেছেন, তেমনি অনেক বেছেবুছে নিয়েছেন নিজের বাহনটিকেও। কুনিন্দরাজ অমোঘভূতির মুদ্রায় লক্ষ্মীর পাশে হরিণ আছে। কুমার গুপ্তর টাকায় লক্ষ্মীর পাশে ময়ূর। শশাঙ্কর মুদ্রায় লক্ষ্মীর পাশে হাঁস। তেমনি, কোথাও লক্ষ্মীর হাতে পদ্ম, বাহন সিংহ। নেপালে লক্ষ্মীর বাহন আবার কচ্ছপ বা কূর্ম। কিন্তু চঞ্চলা দেবী এর কোনওটিকেই স্থায়ীভাবে নিজের দখলে রাখতে পারেননি। সিংহ নিয়েছেন মা দুর্গা, হাঁস নিয়েছেন সরস্বতী, ময়ূর বাহন কার্তিকের। অন্যদিকে, কূর্ম বিষ্ণুর অবতার। বাধ্য হয়ে পেঁচাকেই বাহন করেছেন লক্ষ্মী।
কোজাগরী নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি- ২০১৯
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:
কোজাগরী পূর্ণিমা আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ২৫ আশ্বিন ১৪২৬, শনিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১২/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ১২টা ৩৭ মিনিট থেকে।
কোজাগরী পূর্ণিমা শেষ:
বাংলা তারিখ: ২৬ আশ্বিন ১৪২৬, রবিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১৩/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ২টো ৩৮ মিনিট পর্যন্ত।
কোজাগরী পূর্ণিমার উপবাস:
বাংলা তারিখ: ২৬ আশ্বিন ১৪২৬, রবিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১৩/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ২টো ৩৮ মিনিট পর্যন্ত
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে:
কোজাগরী পূর্ণিমা আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ২৪ আশ্বিন ১৪২৬, শনিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১২/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ১২টা ৩ মিনিট থেকে।
কোজাগরী পূর্ণিমা শেষ:
বাংলা তারিখ: ২৫ আশ্বিন ১৪২৬, রবিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১৩/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ১টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত।
কোজাগরী পূর্ণিমার উপবাস:
বাংলা তারিখ: ২৫ আশ্বিন ১৪২৬, রবিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১৩/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ১টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত।
লক্ষ্মীর পদচিহ্ন...। ছবি - লেখকের তোলা |
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:
কোজাগরী পূর্ণিমা আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ২৫ আশ্বিন ১৪২৬, শনিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১২/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ১২টা ৩৭ মিনিট থেকে।
কোজাগরী পূর্ণিমা শেষ:
বাংলা তারিখ: ২৬ আশ্বিন ১৪২৬, রবিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১৩/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ২টো ৩৮ মিনিট পর্যন্ত।
কোজাগরী পূর্ণিমার উপবাস:
বাংলা তারিখ: ২৬ আশ্বিন ১৪২৬, রবিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১৩/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ২টো ৩৮ মিনিট পর্যন্ত
এসো মা লক্ষ্মী বোস ঘরে। ছবি - লেখকের তোলা |
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে:
কোজাগরী পূর্ণিমা আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ২৪ আশ্বিন ১৪২৬, শনিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১২/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ১২টা ৩ মিনিট থেকে।
কোজাগরী পূর্ণিমা শেষ:
বাংলা তারিখ: ২৫ আশ্বিন ১৪২৬, রবিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১৩/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ১টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত।
কোজাগরী পূর্ণিমার উপবাস:
বাংলা তারিখ: ২৫ আশ্বিন ১৪২৬, রবিবার।
ইংরেজি তারিখ: ১৩/১০/২০১৯।
সময়: রাত্রি ১টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত।
দিনে নয়, রীতি অনুযায়ী মা লক্ষ্মী পুজো নেন রাতে৷ যে রাতে লক্ষ্মীর পুজো হয়, সেটি হলো কোজাগরী পূর্ণিমা। এই পুজোয় মহিলাদেরই অগ্রাধিকার৷ সন্ধ্যায় পুজো করে সারারাত জেগে থাকাই কোজাগরী-রীতি। ‘কোজাগরী’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘কঃ জাগর’ শব্দবন্ধ থেকে। ‘কঃ’ মানে কে, ‘জাগর’ শব্দের অর্থ জেগে আছ। অর্থাৎ, কে জেগে আছ? ‘কোজাগর’ মানে, ‘কে জাগে?’
কে আবার জাগে? যার কিছু নেই, সে কিছু পাওয়ার আশায় জাগে। যার অনেক আছে সে সব হারানোর ভয়ে জাগে! কথিত আছে, এদিন রাতে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন দেবী৷ ঘুরে ঘুরে দেখেন কোন ঘরে কে জেগে তাঁর আরাধনা করছে। যে ভক্ত শুধু নারকেলের জল খেয়ে তাঁর আরাধনা করে, পাশা খেলতে খেলতে রাত জেগে রয়েছেন, তাঁকেই আশীর্বাদ করেন লক্ষ্মী৷ তাঁর ঘরেই থেকে যান। তাঁর হাতেই ধরিয়ে দেন ধন সম্পদে পরিপূর্ণ ঝাঁপি। তাঁকেই দেন ধনসম্পত্তি। সুন্দরী মা কিন্তু আধুনিকা রমণীর মতোই চঞ্চলা। মায়ের এই চঞ্চলা চরিত্রের হ্যাঁচকা টানেও যিনি কাতর হন না, তিনিই লক্ষ্মীর বরপুত্র, বাকিরা পরপুত্র।
দেবী লক্ষ্মী দ্বিভূজা। তিনি বিষ্ণুর পত্নী, ছয়টি বিশেষ গুণের দেবী। তাঁর অপর নাম মহালক্ষ্মী। বাহন পেঁচা। শুধু ধনই নয়, দেবী লক্ষ্মী আরও বিভিন্ন প্রকার সম্পদ প্রদান করেন। তিনি খ্যাতি, জ্ঞান, সাহস ও শক্তি, জয়, সুসন্তান, বীরত্ব, স্বর্ণ, অন্যান্য রত্নরাজি, শস্য, সুখ, বুদ্ধি, সৌন্দর্য, উচ্চাশা, উচ্চভাবনা, নৈতিকতা, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন দেন। এক কথায় লক্ষ্মী পূজা করলে মানুষ সার্বিকভাবে সুন্দর ও চরিত্রবান হন।
দেবী লক্ষ্মী দ্বিভূজা। তিনি বিষ্ণুর পত্নী, ছয়টি বিশেষ গুণের দেবী। তাঁর অপর নাম মহালক্ষ্মী। বাহন পেঁচা। শুধু ধনই নয়, দেবী লক্ষ্মী আরও বিভিন্ন প্রকার সম্পদ প্রদান করেন। তিনি খ্যাতি, জ্ঞান, সাহস ও শক্তি, জয়, সুসন্তান, বীরত্ব, স্বর্ণ, অন্যান্য রত্নরাজি, শস্য, সুখ, বুদ্ধি, সৌন্দর্য, উচ্চাশা, উচ্চভাবনা, নৈতিকতা, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন দেন। এক কথায় লক্ষ্মী পূজা করলে মানুষ সার্বিকভাবে সুন্দর ও চরিত্রবান হন।
লক্ষ্মী পৌরাণিক হিন্দু দেবী। সমৃদ্ধি আর সৌভাগ্যের দেবী। হিন্দুদের ঘরে পুজো পান প্রায় সারা বছর।বিশেষ গুরত্ব পান অঘ্রহায়ণ-পৌষ মাসে। শুধু বাংলাই নয়, পটে-ঘটে-প্রতিমায় লক্ষ্মী পুজো পান দেশে-বিদেশে। নানা জায়গায় নানা পদ্ধতিতে, নানা উপচারে। বরিশালে কলা গাছে কাপড় জড়িয়ে কলাবউয়ের মতো হয়ে পুজো পান লক্ষ্মী। যশোর জেলায় লক্ষ্মী প্রতিমা গড়া হয় ধানের গাছ আর কাপড় দিয়ে। ঢাকায় পুজো হয় পটে। ত্রিপুরায় প্রচলিত সরা পুজো। কোনও কোনও জায়গায় সশীস ডাবকে লাল কাপড় জড়িয়ে দেবী মূর্তির রূপ দেওয়া হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন গ্রামে একটি বাঁশের মাথায় নতুন ধান সহ খড়ের আঁটি বেঁধে তৈরি করা হয় লক্ষ্মী। নীচে আতপ চালের বাটা জলে গুলে আলপনা দেওয়া হয় মই, জোয়াল, লাঙল, ধামা-কুলো। আর ঘরের দিকে মুখ করে লক্ষ্মীর পদচিহ্ন। বিশ্বাস ওই পথেই মা ঢুকবেন গৃহস্থের ঘরে।
এ ব্যাপারে শহর অবশ্য হাইটেক। রেডিমেড আলপনার জন্য ভরসা রাস্তার দোকান। পট থেকে পুজোর উপচার – ভরসা দশকর্মা ভাণ্ডার। মিলে যাবে রেডিমেড নাড়ুও। ফেল কড়ি মাখো তেল। গৃহিণীরা নিজেরাই এই পুজো করতে পারেন৷ শ্বেতপদ্ম ও শ্বেতচন্দনে লক্ষ্মীর আরাধনা করতে হয়৷ ফল-মূলের পাশাপাশি চিড়ে এবং নারকেল লক্ষ্মী পুজোয় আবশ্যিক৷ একে চিপিটক বলে৷
গৃহস্থের ঘরে ধনদেবীর আরাধনা। ছবি - লেখকের তোলা |
অনেকে বলেন, এই শরতেই মাঠ ভরে ওঠে পাকা ধানে। কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে জেগে থেকে সেই শস্য পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি শস্যের দেবীর আশীর্বাদ চেয়ে নেওয়া। অনেকে বলেন, দুর্গাপুজোয় খরচ করতে হয়েছে বহু টাকা। বছরের বাকি দিনগুলোয় যাতে ভাঁড়ারে টান না পড়ে, সেই জন্যই কোজাগরী পূর্ণিয়ায় ধনদেবীর আরাধনা।
শারদ পূর্ণিমার রাতটি জেগে থাকার কথা! লক্ষ্মী কখন আসবেন ঘরে, সেই প্রতীক্ষাতে। রীতি অনুযায়ী পুজো শেষে সারারাত পাশা খেলতে হয়৷ কিন্তু এখন তো রীতি না মানাটাই রীতি! তাই পাশা খেলা ফেলে পাশ ফিরে শোয় বাঙালি।
একা রাত জাগে লক্ষ্মীপেঁচা..
‘মেঠো চাঁদ আর মেঠো তারাদের সাথে,
জাগে একা অঘ্রাণের রাতে
সেই পাখি…।’
জাগে একা অঘ্রাণের রাতে
সেই পাখি…।’
- Subscribe: https://www.youtube.com/c/RAJATKANTIBERA
- Blog: http://rajatkb.blogspot.com
- Google Plus: https://plus.google.com/u/0/
- Linkedin: https://www.linkedin.com/in/rajatkanti-bera-275134139/
- Facebook: https://www.facebook.com/rajatkanti.bera
No comments:
Post a Comment