Friday, September 29, 2017

Sadness of Navami, নবমী নিশি গো পোহায়ো না ধরি পায়...

না পোহায়ো নবমী নিশি...


ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ...
ঠাকুর যাবে বিসর্জন৷

বছর ঘুরে ঘরে এসেছিল মেয়ে।
ক’দিন যেতে না যেতেই দুয়ারে কড়া নাড়ল নবমী নিশি। বিদায়ের বোল তুলল ঢাকের কাঠি। মন না চাইলেও মনে মনে উমা-বিদায়ের প্রস্তুতি। মেনকার মতোই মন খারাপ আপামর বাঙালির। নীল আকাশের পেঁজা তুলোর ভেলায়, কাশফুলের মেলায় মন খারাপের হাওয়া৷ সংসারের এক কোণে ক্রমেই একাকিনী হতে থাকা উমা৷ দরজার কোণে লুকিয়ে চোখের জল মুছে মায়ের কাতর আর্তি,

'যেও না নবমী নিশি লয়ে তারা দলে..
তুমি গেলে দয়াময়ী এ পরাণ যাবে।
উদিলে নির্দয় রবি উদয় অচলে,
নয়নের মণি নয়ন হারাবে।।’

কিন্তু এই জগৎ সংসারের নিয়মের নড়চড় করা যায় না। শিব ঠাকুরের কাছে দুর্গা যদি দশমী পর্যন্তই বাপের বাড়িতে থাকার অনুমতি নিয়ে থাকেন, তা হলে সে অনুমতির নড়চড় করবেন না হিমালয়।
তাই বিচ্ছেদ-বিজয়া অনতিদূরে৷
কিন্তু এ আর নতুন কথা কী? আসা-যাওয়াই তো জীবনের চিরন্তন সত্য।
কিন্তু সব সত্যিকে সব সময় মেনে নিতে চায় না মন।
আর চাইবেই বা কেন? মাত্র ক’টা দিনেরই তো পুজো। শুরু হতে না হতেই যেন বেজে যায় বিসর্জনের বাজনা!! সুখের দিন বুঝি এভাবেই দ্রুত শেষ হয়ে যায় ...। সে কথা জেনেই মেয়ে বিদায়ের জন্য মনকে তৈরি করেন মা মেনকা। জানতে চান- আবার কবে আসবি মা?


নবমীর সকাল থেকেই মন খারাপ৷
প্যাণ্ডেলে প্যান্ডেলে আনমনে বেজে চলা ঢাকেও সেই বিসর্জনের বোল৷ সন্ধ্যা নামতেই জ্বলে উঠবে আলো। আলো-উৎসব-ভিড় সবই থাকবে। কিন্তু সব কিছুরই রঙ যেন মনে হবে বড্ড বেশি ফিকে৷ আজ যে নবমী, রাত পোহালেই দশমী। উমা বিদায়।

দশমীর সকাল হলেই প্রথা মেনে, উমার কৈলাসে ফেরার বার্তা নিয়ে উড়ে যাবে নীলকণ্ঠ পাখি। মেনকার মন না চাইলেও ফেরাতে হবে উমাকে। শ্বশুরবাড়ি ফেরার আগে বাপের ঘরে পান্তা ভাতের সঙ্গে কচুর শাক, শাপলা খেয়ে যাবে মেয়েটা। এটাই যে মেয়ের দীর্ঘদিনের অভ্যেস। শুধু পান্তা ভাত-শাক না দিয়ে দেবীকে অনেক ইলিশ মাছও ভেজে নিবেদন করেন। দেবীর শ্বশুরবাড়ি যাত্রার আগে পান্তা-ইলিশ দেওয়ার প্রথা মূলত পূর্ববঙ্গীয়। পূর্ববঙ্গ তথা অধুনা বাংলাদেশে এখনও নববর্ষের উৎসবে পান্তা-ইলিশ অপরিহার্য। গ্রাম্য মানুষের বিশ্বাস, পান্তা খেলে পেট ঠান্ডা থাকে। পাশাপাশি, সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনেকটা দূরে যেতে হলে পান্তা খাওয়া পূর্ববঙ্গের রীতি। সেই কারণেই কৈলাসে পাড়ির আগে দেবীকে পান্তা দেওয়া হয়। আসলে দেবী দুর্গাকে ঘরের মেয়ে ভেবেই তো পুজো করা হয়। কল্যাণ কামনাতেই দেবী তথা ঘরের মেয়েকে বিদায়ের আগে মুখে পান্তা-কচু শাক তুলে দেওয়া প্রথা। শুধু পান্তা না দিয়ে ভালবেসে ইলিশ মাছও ভেজে দেওয়া হয়।

সেলিমপুর পল্লি, ২০১৭। থিম- অনুরণন। ছবি - লেখকের তোলা 
এর বেশি আর কী-ই বা খাওয়ানো যায়! এই ক’টা দিনই যে বাপের বাড়িতে কাটাবার অনুমতি পেয়েছিল মেয়েটা। কোথা দিয়ে যে দিনগুলো ফুরলো!
তাই তো মা মেনকার কাতর আর্তি-
‘নবমী নিশি গো পোহায়ো না ধরি পায়, 
তুই চলে গেলে মাগো উমা মোরে ছেড়ে যায়।’

নবমী নিশি যে আসবে সে তো জানা কথা। সে জন্য এবারও মেনকা আগেভাগে বলেছিলেন,
‘এনে উমা ফিরায়ো না আর’। 

রামপ্রসাদের গানে আছে -
‘গিরি, এবার আমার উমা এলে,
আর উমা পাঠাবো না।
বলে বলবে লোকে মন্দ,
কারো কথা শুনব না।
যদি সে মৃত্যুঞ্জয় উমা নেবার কথা কয়,
আমরা মায়ে-ঝিয়ে করবো ঝগড়া। 
জামাই বলে মানবো না।।’

কিন্তু কে শোনে কার কথা? নিয়মের নিগড়ে বাঁধা সবাই। যে নিয়মের নড়চড় করতে পারে না কেউ।এত কথা বলে উমাকে আনা হলেও, ক’দিন যেতে না যেতেই আসে নবমী। হু হু করে ওঠে মায়ের মন। ভাল করে তো খাও.য়ানোই হল মেয়েটাকে। কত কথা এখনও বাকি!

কিন্তু মন না চাইলেও বিদায় দিতে হবে উমাকে।
নিয়ম যে মেনকাদেরও মানতে হয়।

আসছে বছর হাতে সময় নিয়ে আসিস মা....


No comments:

Post a Comment

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...