Saturday, July 15, 2017

Haunted Barog Tunnel. Longest Tunnel in Shimla-Kalka Railway

সুড়ঙ্গের অন্ধকারে কর্ণেল ব্যারগের আত্মা!


ব্যারগ সুড়ঙ্গ।

হয়তো কাকতালীয়...... কিন্তু ঘটেছিল ঘটনাটা!!

সুড়ঙ্গের মধ্যে ট্রেনটা ঢুকতেই একটা অচেনা দমকা হাওয়া কামরার মধ্যে দিয়ে বয়ে গেল। টেবিলের ওপর থেকে নীচে পড়ে শিবালিক এক্সপ্রেসের মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে লাগল জলভর্তি বোতলটা। যেন কিছুই হয়নি এমন ভান করে বোতলটা তুলে টেবিলে রাখলাম। কিন্তু হঠাৎ দমকা হাওয়া কেন? কর্ণেল ব্যারগের আত্মা...?




যে শিবালিক এক্সপ্রেসে চড়ব বলে প্রায় ৫০ ঘণ্টা জার্নি করেছি কালকা মেলে, (দেখুন আগের লেখা - কলকাতা থেকে কালকা: শতাব্দী প্রাচীন কালকা মেলে ৪৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট!) সেই শিবালিক এক্সপ্রেসের যাত্রাপথেই আছে গা ছমছমে ভূতুড়ে কাহিনি। এক কর্ণেলের অতৃপ্ত আত্মার ঘুরে বেড়ানোর কাহিনি!

কালকা থেকে সিমলা রেল লাইন পাতার সময় পাহাড় কেটে তৈরি করতে হয়েছিল ১০৭টি সুড়ঙ্গ ও ৮৮৯টি সেতু। খুব কম সময়ের মধ্যে ওই কাজ শেষ করেছিলেন ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ররা। ৩৩ নম্বর সুড়ঙ্গখোঁড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়র কর্ণেল ব্যারগকে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য কর্মীদের দু’দলে ভাগ করেন তিনি। অঙ্ক কষে বলে দেন, দু’প্রান্ত থেকে কোন দিকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে গেলে মাঝখানে মিলে যাবে। বড় পাহাড়ের দু’প্রান্ত থেকে ব্যারগের কর্মীরা সুড়ঙ্গ খোঁড়া শুরু করেন। অসংখ্য আয়না ও গ্যাসের আলো দিয়ে আলোকিত করা হয় অন্ধকার সুড়ঙ্গ। কিন্তু যে সময়ে দু’টি সুড়ঙ্গ মিলিত হওয়ার কথা ছিল, সেই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সুডঙ্গ মেলেনি। আসলে অঙ্ক কষায় ভুল হয়েছিল ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়রের। ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শ্রমিকরা। কারণ, ব্যারগ সাহেবের ভুল হিসেবের জন্য তাঁদের পরিশ্রম জলে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইংরেজ সরকারের নির্দেশে কর্ণেল ব্যারগের ১ টাকা জরিমানা করা হয়। কারণ, তিনি সরকারি সময় ও সম্পত্তি দুই-ই নষ্ট করেছেন। ব্যারগও বুঝতে পারেন, তাঁর অঙ্কে ভুল ছিল। ব্যর্থতার লজ্জা আর জরিমানার অপমান সহ্য করতে পারেননি ইংরেজ সাহেব। একদিন অসম্পূর্ণ সুড়ঙ্গের মধ্যেই আত্মহত্যা করেন কর্ণেল ব্যারগ। প্রিয়
কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে অন্ধকার সুড়ঙ্গে নিজেকে গুলি করেন ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়র। হকচকিয়ে যায় সঙ্গী সারমেয়! মুহূর্তের মধ্যে বুঝতে পারে কী ঘটেছে। চিৎকার করতে করতে ব্যারগ সাহেবের কুকুর সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে ছুটে যায় গ্রামের দিকে। তার আচরণ অস্বাভাবিক লাগায় গ্রামবাসীরা বুঝতে পারেন, কিছু একটা ঘটেছে। সবাই যখন তার পিছন পিছন ছুটে যান সুড়ঙ্গের মধ্যে, ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে ব্যারগের। ইঞ্জিনিয়রের অকাল মৃত্যুতে বন্ধ হয়ে যায় সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ। ওই এলাকাতেই সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে।

সুড়ঙ্গ সমাচার। সৌজন্যে - গুগল ইমেজ

বেশ কিছুদিন পরে মুখ্য ইঞ্জিনিয়র এইচ এস হ্যারিংটনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় অসম্পূর্ণ সুড়ঙ্গ শেষ করার। বিশাল পাহাড় নিয়ে তিনিও একই সমস্যায় পড়েন। সেই সময় হঠাৎ একদিন তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় ভালকু নামে স্থানীয় এক সাধুর। সেই সাধুই হ্যারিংটনকে সমীক্ষার কাজে সাহায্য করেন। ১৯০০ সালে সাধুকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করেন হ্যারিংটন। ব্যারগ যেখানে সুড়ঙ্গ খুঁড়েছিলেন, তার পাশে নতুন করে কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ১৯০৩ সালে। খরচ দাঁড়ায় ৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। হ্যারিংটন সুড়ঙ্গ খোঁড়ায় সফল হলেও কর্ণেল ব্যারগের নামেই নাম হয় এলাকার। গড়ে ওঠে ব্যারগ গ্রাম। ৩৩ নম্বর সুড়ঙ্গটি পরিচিত হয় ব্যারগ সুড়ঙ্গ নামে। কিন্তু ভারতীয় রেল বা এলাকার মানুষ ভালকুকে ভুলে যায়নি। কাজ শেষের পর সাধু ভালকুকে সম্বর্ধনা দেয় ব্রিটিশ সরকার। শুধু তাই নয়, সিমলার পুরনো বাসস্ট্যান্ডে ২০১১ সালে তৈরি হয় ‘বাবা ভালকু রেল সংগ্রহশালা’।




১৯০৩ সালের ৯ নভেম্বর সোমবার, সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় কালকা-সিমলা রেলপথ। ১৯৩০ সালে নতুন করে নম্বর দেওয়া হয় সুড়ঙ্গগুলির। ভিতর দিয়ে ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত না থাকায় তখন বাদ দেওয়া হয় ৪টি সুড়ঙ্গ। ১৯৩০ থেকে সুড়ঙ্গের সংখ্যা ছিল ১০৩। ২০০৬ সালে সোলান স্টেশনের সামনে ৪৬ নম্বর টানেলটিও বাদ হয়ে যায়। ফলে, এখন কালকা-সিমলা রেলপথে টানেলের সংখ্যা ১০২। ব্যারগ কালকা-সিমলা রেলপথের সব থেকে লম্বা সুড়ঙ্গ। এবং straightest tunnel in the world। দৈর্ঘ ১১৪৩.৬১ মিটার। ২৫ কিলোমিটার গতিবেগে সুড়ঙ্গ পেরোতে সময় লাগে আড়াই মিনিট।

UNESCO World Heritage train is on Barog Station, Shimla. Barog railway station is a small railway station in Solan district in the Indian state of Himachal Pradesh. The station lies on UNESCO World Heritage Site Kalka–Shimla Railway. Barog railway station is located at an altitude of 1,552 metres (5,092 ft) above mean sea level.
ব্যারগ স্টেশন। ছবি - লেখকের তোলা
সেতুগুলির মধ্যে একটি ১৮.২৯ মিটার লম্বা স্টিলের তেরি। বাকিগুলি অনেকটা গ্যালারির মতো। প্রাচীন রোমান স্থাপত্যের আদলে তৈরি। কান্দাঘাট ও কানোহ স্টেশনের মাঝের ৪৯৩ নম্বর সেতুটি ‘আর্চ গ্যালারি’ নামে পরিচিত। এটি তিন স্তর গ্যালারির মতো পাথরের তৈরি। সোনওয়ারা ও ধরমপুরের মাঝে অবস্থিত ২২৬ নম্বর সেতুটি পাঁচ স্তর বিশিষ্ট গ্যালারির মতো। মজার ব্যাপার, এই রুটের ২০ টি ছোট ছোট স্টেশনের প্রত্যেকটিই কোনও না কোনও সেতুর কাছাকাছি। আসলে সেতু তৈরির সময় শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্য যে ছাউনিগুলি তৈরি হয়েছিল, সেগুলিই পরে স্টেশনে পরিণত হয়।

সিমলা যাওয়ার পথে ব্যারগ স্টেশনের আগে পড়ে ব্যারগ সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গটিকে ঘিরেই প্রচলিত ভূতুড়ে কাহিনি৷ স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, এই সুড়ঙ্গের মধ্যে এখনও ঘুরে বেড়ায় কর্ণেল ব্যারগের অতৃপ্ত আত্মা৷ অনেকে দেখেছেন বলেও দাবি করেন। শুধু তাই নয়, অনেকে বলেন, সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে টয়ট্রেন যাওয়ার সময় অজানা গলার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়, দমকা বাতাস গায়ে লাগে। কখনও কখনও অদৃশ্য কিছু জিনিসের ছোঁয়াও পাওয়া যায়।




সিমলা সফরে যাওয়ার আগে অন্য শহুরে মানুষের মতো আমিও উড়িয়ে দিয়েছিলাম ব্যাপারটা। কিন্তু দমকা হাওয়ায় ভর্তি জলের বোতল টেবিল থেকে পড়ে যাওয়ায় কেমন যেন খটকা লাগল! তবে কারও কোনও ক্ষতি হয়নি। স্থানীয়রা বলেন, এখনও পর্যন্ত কারও কোনও ক্ষতি করেনি ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়র কর্ণেল ব্যারগের অতৃপ্ত আত্মা।

© All rights of this article and this BLOG reserved for RAJATkanti BERA. Unauthorized use or reproduction of any cause is strictly prohibited.


No comments:

Post a Comment

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...