বাজল তোমার আলোর বেণু, মাতল যে ভুবন
আজ প্রভাতে সে সুর শুনে খুলে দিনু মন।।
অরুণবীণায় সে সুর বাজে—
এই আনন্দযজ্ঞে সবার মধুর আমন্ত্রণ।।
আজ সমীরণ আলোয় পাগল নবীন সুরের বীণায়,
আজ শরতের আকাশবীণা গানের মালা বিলায়।
তোমায় হারা জীবন মম
তোমারই আলোয় নিরুপম—
ভোরের পাখি ওঠে গাহি তোমারই বন্দন।।
ঘরে ঘরে তখন আলোর বেণু বাজার অপেক্ষা।
ছোটবেলায় এই গানের কোনও লাইন বা শব্দের মানেই জানতাম না। জানতাম না, কার লেখা কার সুর, কারই বা গাওয়া। কিন্তু ঘুম জড়ানো চোখের সেই ভোরে মানে না বোঝা সেই গানই কানের ভিতর দিয়ে যেন মরমে ঢুকে যেত।
ভোরের বাতাস ভরে উঠত শিউলির গন্ধে।
স্পষ্ট বুঝতে পারতাম, পুজো এসে গেল।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই উদাত্ত কণ্ঠ -- ‘আজ দেবীপক্ষের প্রাক-প্রত্যুষে জ্যোতির্ম্ময়ী জগন্মাতা মহাশক্তির শুভ আগমন-বার্তা আকাশ-বাতাসে বিঘোষিত। মহাদেবীর পুণ্য স্তবনমন্ত্রে মানবলোকে জাগরিত হোক ভূমানন্দের অপূর্ব প্রেরণা। আজ শারদ গগনে-গগনে দেবী ঊষা ঘোষণা করছেন মহাশক্তির শুভ আবির্ভাব-ক্ষণ।’
এরপর তিনবার শঙ্খধ্বনি।
তারপর শুরু অনুষ্ঠান।
সুপ্রীতি ঘোষের কণ্ঠে সেই গান – ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’।
১৩৩২ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে প্রথম প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি। তখন নাম ছিল ‘শারদ বন্দনা’। পরে নাম হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। এত বছর পর আজও তার জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মহাজাতি সদনের একটি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে মজা করে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিলেন, 'ঘরে খিল দেওয়া থাকলেও আমি পৌঁছে যাই সকলের কাছে।' কারণ বেতারে চণ্ডীপাঠ সবাই শোনেন। এই অনুষ্ঠানে শ্রীশ্রীচণ্ডী থেকে নির্বাচিত কিছু স্তোত্র, আগমনী গান ও বাংলা ভক্তিগীতি সহ শ্রীশ্রীচণ্ডীর দুটি গল্প শ্রুতিনাটকের আকারে শোনানো হয়। অনুষ্ঠানে চণ্ডীপাঠসহ অন্যান্য পাঠগুলি করেছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। গান লিখেছিলেন বাণীকুমার এবং সুরারোপ করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। গানগুলি গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সুপ্রীতি ঘোষ প্রমুখ বিশিষ্ট শিল্পী।
কিন্তু ১৯৭৬ সালে নতুন কিছু করে চমকে দিতে চেয়েছিল অল ইন্ডিয়া রেডিও। বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রর অনুষ্ঠান বন্ধ করে অভিনেতা উত্তমকুমারকে দিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিল আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র পরিবর্তে তৈরি হয় ‘দুর্গতিহারিণী’৷ উত্তমকুমার ছাড়াও পাঠে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন বসন্ত চৌধুরী, পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, সংবাদ পাঠিকা ছন্দা সেন। তৎকালীন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের বিভাগীয় প্রধান ডঃ গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়কে সংস্কৃত স্তোত্র পাঠে এবং নামী স্তোত্র গায়িকা মাধুরী মুখোপাধ্যায়কে কাজে লাগান হয়েছিল। কিন্তু আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ ভাবতেও পারেনি, অভিনেতা হিসেবে উত্তমকুমারকে অন্তরে জায়গা দিলেও মহিষাসুরমর্দিনীতে তাঁর পাঠ গ্রহণ করবেন না শ্রোতারা। ফলে, শেষরক্ষা হয়নি৷ অনুষ্ঠানটি গ্রহণ করেনি শ্রোতারা। পরে তাই ফিরিয়ে আনতে হয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র-পঙ্কজ মল্লিক জুটির পুরনো মহিষাসুরমর্দিনীকে৷
জাগো, তুমি জাগো, জাগো দুর্গা,
জাগো দশপ্রহরণধারিণী,
অভয়াশক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো।
প্রণমি বরদা অজরা অতুলা
বহুবলধারিণী রিপুদলবারিণী জাগো মা।
শরণময়ী চন্ডিকা শংকরী জাগো, জাগো মা,
জাগো অসুরবিনাশিনী তুমি জাগো।।
মহালয়ার ভোরে সর্বভারতীয় শ্রোতাদের জন্য অনুষ্ঠানটির হিন্দি সংস্করণ একই সময় সম্প্রচারিত হয় দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি। প্রথম দিকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হত, কিন্তু ১৯৬৬ সাল থেকে রেকর্ড করা অনুষ্ঠানই সম্প্রচারিত হয়।
ইট-কাঠ-বালি-পাথরের এই শহরে মাথা তুলতে পারে না কাশফুল। শিউলির গন্ধ আজ আর তেমন পাওয়া যায় না শহরে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে শোনা যায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর চণ্ডীপাঠ। কমপ্যাক্ট ডিস্কে পাওয়া যায় ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও ভোর চারটেয় রেডিওতে কান পাতলেন অসংখ্য মানুষ।
বেজে উঠল আলোর বেণু...।
ভোরের বাতাস ভরে উঠত শিউলির গন্ধে।
স্পষ্ট বুঝতে পারতাম, পুজো এসে গেল।
ভোরের বাতাসে ভরে উঠত শিউলির গন্ধ। ছবি - লেখকের তোলা |
এরপর তিনবার শঙ্খধ্বনি।
তারপর শুরু অনুষ্ঠান।
সুপ্রীতি ঘোষের কণ্ঠে সেই গান – ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’।
১৩৩২ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে প্রথম প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি। তখন নাম ছিল ‘শারদ বন্দনা’। পরে নাম হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। এত বছর পর আজও তার জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মহাজাতি সদনের একটি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে মজা করে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিলেন, 'ঘরে খিল দেওয়া থাকলেও আমি পৌঁছে যাই সকলের কাছে।' কারণ বেতারে চণ্ডীপাঠ সবাই শোনেন। এই অনুষ্ঠানে শ্রীশ্রীচণ্ডী থেকে নির্বাচিত কিছু স্তোত্র, আগমনী গান ও বাংলা ভক্তিগীতি সহ শ্রীশ্রীচণ্ডীর দুটি গল্প শ্রুতিনাটকের আকারে শোনানো হয়। অনুষ্ঠানে চণ্ডীপাঠসহ অন্যান্য পাঠগুলি করেছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। গান লিখেছিলেন বাণীকুমার এবং সুরারোপ করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। গানগুলি গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সুপ্রীতি ঘোষ প্রমুখ বিশিষ্ট শিল্পী।
কিন্তু ১৯৭৬ সালে নতুন কিছু করে চমকে দিতে চেয়েছিল অল ইন্ডিয়া রেডিও। বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রর অনুষ্ঠান বন্ধ করে অভিনেতা উত্তমকুমারকে দিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিল আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র পরিবর্তে তৈরি হয় ‘দুর্গতিহারিণী’৷ উত্তমকুমার ছাড়াও পাঠে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন বসন্ত চৌধুরী, পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, সংবাদ পাঠিকা ছন্দা সেন। তৎকালীন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের বিভাগীয় প্রধান ডঃ গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়কে সংস্কৃত স্তোত্র পাঠে এবং নামী স্তোত্র গায়িকা মাধুরী মুখোপাধ্যায়কে কাজে লাগান হয়েছিল। কিন্তু আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ ভাবতেও পারেনি, অভিনেতা হিসেবে উত্তমকুমারকে অন্তরে জায়গা দিলেও মহিষাসুরমর্দিনীতে তাঁর পাঠ গ্রহণ করবেন না শ্রোতারা। ফলে, শেষরক্ষা হয়নি৷ অনুষ্ঠানটি গ্রহণ করেনি শ্রোতারা। পরে তাই ফিরিয়ে আনতে হয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র-পঙ্কজ মল্লিক জুটির পুরনো মহিষাসুরমর্দিনীকে৷
জাগো, তুমি জাগো, জাগো দুর্গা,
জাগো দশপ্রহরণধারিণী,
অভয়াশক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো।
প্রণমি বরদা অজরা অতুলা
বহুবলধারিণী রিপুদলবারিণী জাগো মা।
শরণময়ী চন্ডিকা শংকরী জাগো, জাগো মা,
জাগো অসুরবিনাশিনী তুমি জাগো।।
মহালয়ার ভোরে সর্বভারতীয় শ্রোতাদের জন্য অনুষ্ঠানটির হিন্দি সংস্করণ একই সময় সম্প্রচারিত হয় দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি। প্রথম দিকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হত, কিন্তু ১৯৬৬ সাল থেকে রেকর্ড করা অনুষ্ঠানই সম্প্রচারিত হয়।
ইট-কাঠ-বালি-পাথরের এই শহরে মাথা তুলতে পারে না কাশফুল। শিউলির গন্ধ আজ আর তেমন পাওয়া যায় না শহরে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে শোনা যায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর চণ্ডীপাঠ। কমপ্যাক্ট ডিস্কে পাওয়া যায় ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও ভোর চারটেয় রেডিওতে কান পাতলেন অসংখ্য মানুষ।
বেজে উঠল আলোর বেণু...।
- Subscribe: https://www.youtube.com/c/RAJATKANTIBERA
- Blog: http://rajatkb.blogspot.com
- Google Plus: https://plus.google.com/u/0/
- Linkedin: https://www.linkedin.com/in/rajatkanti-bera-275134139/
- Facebook: https://www.facebook.com/rajatkanti.bera
No comments:
Post a Comment