Tuesday, September 12, 2017

Indian Institute of Advanced Study, Shimla (ভাইসরিগ্যাল লজ)

ভাইসরিগ্যাল লজ...

The Indian Institute of Advanced Study: Shimla

নীল আকাশ মাথায় করে দাঁড়িয়ে বিশাল প্রাসাদ..। ছবি - লেখকের তোলা
ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডি।
নামটা শুনে মনে হতেই পারে, এখানে আর দেখার কী আছে..! আমাদের একই কথা মনে হয়েছিল দেহরাদুনে ফরেস্ট রিসার্চ ইন্সটিটউট-এর কথা শুনে। কিন্তু গিয়ে ভুল ভেঙেছিল। এবার ভুল ভাঙল গিয়ে। সিমলা মল রোড থেকে কার্ট রোড ধরে অ্যাডভান্সড স্টাডি-র দূরত্ব বড়জোর ৪ কিলোমিটার। সময় লাগল ২৫ মিনিটের মতো। গাড়িতে উঠতে না উঠতেই নামার সময় হয়ে গেল। গাড়ি যেখানে নামাল, সেখানেই বাঁদিকে টিকিট কাউন্টার। ৫ বছরের ওপরে হলেই টিকিট মাথাপিছু ৪০ টাকা। টিকিট কাউন্টারের পাশেই The Fire station Cafe। কাফের কাছেই গিফট শপ। উপহার থেকে ঘর সাজানোর জিনিস। টিকিট কাটার সময় কাউন্টারে বলে দিলেন, ‘আপনাদের সময় সাড়ে ১১টা।’ কেন বললেন বুঝতে পারলাম না। তবে ভাইসরয় প্রাসাদ দেখে বুঝতে পারলাম, এখানে না এলে সিমলা সফর অসম্পূর্ণ।


সবুজ পাহাড়ি মনোরম পরিবেশের মধ্যে নীল আকাশ মাথায় করে দাঁড়িয়ে বিশাল প্রাসাদ। সামনে বিশাল সবুজ লন, নুড়ি বিছোন পথ। প্রাসাদের পিছনে সাজানো বাগান। যেদিকেই ক্যামেরা ঘোরানো যায়, সেদিকেই অসাধারণ ফ্রেম। তবে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ থেকে সব থেকে ভাল ফ্রেম পাবেন। ওই জায়গা থেকে এক ফ্রেমে ধরতে পারবেন পুরো প্রাসাদকে। একটা কথা মনে রাখবেন, বাইরে যত খুশি ছবি তোলা যাবে, ভেতরে একদম নয়। একটাই নিয়ম - Take Nothing But Photographs – Leave Nothing But Footprints।


ভেবেছিলাম, বাইরে Footprints  রেখেই চলে যেতে হবে হয়তো। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখি, লাইন দিয়ে সবাই ভেতরে ঢুকছে। আমরাও দৌড়ে গিয়ে লাইন দিলাম। নিরাপত্তারক্ষী জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনাদের সময় কখন?’ হঠাত্‍ মনে পড়ল কাউন্টারের সেই ব্যক্তির কথা, ‘...সাড়ে এগারোটা’। মোবাইল ফোনের ঘড়িতে দেখি ১১টা ২৫। বললাম, ‘আমাদের সময় সাড়ে এগারোটা।’ আসলে প্রাসাদের ভেতরে গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা আছে। সকাল ১০টা ১৫ থেকে প্রতি আধ ঘণ্টায় একটি করে ব্যাচ। হিন্দি ও ইংরেজি- দুই ভাষাতেই সব বুঝিয়ে দেবেন গাইড। প্রথম ব্যাচ সকাল ১০টা ১৫-য়, শেষ ব্যাচ বিকেল ৪টে ৫০-এ। প্রতি ব্যাচে সর্বোচ্চ ৪৫ জন।

ভাইসরিগ্যাল লজের ভেতরে কাঠের কাজ। সৌজন্যে - গুগল ইমেজ 
১২৯ বছরের পুরনো ব্রিটিশ আমলের প্রাসাদে ঢুকেই চোখ জুড়িয়ে গেল। ভেতরে পুরো কাঠের কাজ। রাজকীয় মহিমা। ভিতরের একটি অংশই জনসাধারণের জন্য খোলা। কিন্তু নিজে ঘুরে দেখা যাবে না। গাইড ঘুরিয়ে দেখালেন কাঠের কারুকাজ, লাইব্রেরি, সেমিনার রুম, ফটো গ্যালারি। সঙ্গে ইংরেজি ও হিন্দি ধারাভাষ্য। ভেতরে সযত্নে রাখা ভাইসরিগ্যাল চেয়ার, গ্র্যান্ডমাদার্স ক্লক, দেওয়াল জুড়ে পুরনো ভারতের কথা ও ছবি।

স্বাধীনতোত্তর ভারতে এটিই ছিল ভাইসরয়-এর নিবাস। পাহাড়ের মাথার ওপর এমন অপূর্ব সুন্দর প্রাসাদের নকশা করেছিলেন ব্রিটিশ স্থপতি হেনরি আরউইন। লর্ড ডাফরিনের সময়ে ১৮৮০ সালে শুরু হয় এই প্রাসাদের নির্মাণ। শেষ হয় ১৮৮৮ সালে। ওই বছরের ২৩ জুলাই থেকে এই প্রাসাদে থাকতে শুরু করেন লর্ড ডাফরিন। ১৮৮৮ সালে যখন সিমলার বেশিরভাগ জায়গায় বিদ্যুত্‍ আসেনি, তখনই বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছিল ভাইসরিগ্যাল লজ-এ। শুধু তাই নয়, তখন থেকেই ছিল নিজস্ব আগুন নেভানোর ব্যবস্থা। ভেতরে পুরো কাঠের কাজ থাকায় তৈরির সময় থেকেই নেওয়া হয়েছিল বাড়তি সতর্কতা। গাইড বলছিলেন, পুরো প্রাসাদজুড়ে রয়েছে জলের পাইপ। যার মুখে লাগানো রয়েছে বিশেষ মোমের প্রলেপ। আগুন লাগলে তার তাপে ওই মোম গলে গিয়ে জল বেরোতে শুরু করবে। টিকিট কাউন্টারের কাছে এখনও আছে তখনকার দমকলের একটা ইঞ্জিন।

কাঠের দেওয়াল, কাঠের সিলিং। সৌজন্যে - গুগল ইমেজ
পরাধীন ভারতের বহু ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল এখানে। ১৯৪৫ সালের সিমলা কনফারেন্স থেকে ১৯৪৭ সালের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত। বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে টেবিলে বসে, সেই টেবিলটি এখনও আছে। স্বাধীনতার পর নাম হয় রাষ্ট্রপতি নিবাস। গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে আসতেন রাষ্ট্রপতি। পরবর্তীকালে সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ ঠিক করেন, উচ্চশিক্ষার কাজে ব্যবহার করা হবে এই ভবন। ১৯৬৫ সালের ২০ অক্টোবর The Indian Institute of Advanced Study-র উদ্বোধন করেন রাধাকৃষ্ণন

Address
Rashtrapati Nivas, Chaura Maidan,
Near Birds Zoo, Shimla,
Himachal Pradesh 171005
Phone: +91 177 2832930 ; +91 177 2831376

কখন খোলা?
১ জুলাই থেকে ৩০ এপ্রিল- সকাল ৯ থেকে বিকেল ৫
১ মে থেকে ৩০ জুন- সকাল ৯ থেকে সন্ধে ৭




কবে বন্ধ?
জাতীয় ছুটির দিন এবং সোমবার

প্রবেশ মূল্য
ভারতীয় (৫ বছরের ওপর) ৪০ টাকা, বিদেশি ৮৫ টাকা
সরকারি স্কুলের ছাত্রদের দল শিক্ষকের সঙ্গে এলে টিকিট লাগবে না। তবে অভিভাবকদের জন্য ২০ টাকা করে লাগবে।

মনে রাখবেন
ভেতরে পর্যটকদের জন্য কোনও শৌচাগার নেই
কোনও কিছুতে হাত দেবেন না
কোনও আসবাবে বসবেন না


No comments:

Post a Comment

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...