Monday, September 25, 2017

Symbolism Of Goddess Durga's Ten Hands


দুর্গা আসলে কে? 

দেবীর জন্মকথা... অসুর বধের বৃত্তান্ত...


ছবি - লেখকের তোলা 

স্বর্গে তখন হুলস্থূল কাণ্ড!
স্বর্গের দখল নিয়েছে অসুররা। এলাকা ছাড়া দেবতারা!

এমন পরিস্থিতিতে দুর্গার সৃষ্টি স্বর্গের দেবতাদেরকে অসুরদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্য।

দেবী দুর্গা ত্রিনয়না বলে তাঁকে ‘ত্রৈম্বক্যে’ বলা হয়। ছবি - লেখকের তোলা 
মার্কণ্ডেয় পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বরে শক্তিশালী মহিষাসুর স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জয় করে তিন লোকেই রাজত্ব কায়েম করেন। ফলে স্বর্গ থেকে বিতাড়িন হন দেবতারা। মর্ত্যের মানুষেরও দুর্দশা চরমে ওঠে। বিতাড়িত দেবতারা ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের শরনাপন্ন হন। কিন্তু মহিষাসুরকে বধ করার ক্ষমতা কোনও পুরুষের ছিল না। তাই বিষ্ণু দেবতাদের পরামর্শ দেন, প্রত্যেক দেবতা যেন নিজের শক্তি দিয়ে নারীমূর্তির একটি করে অংশ তৈরি করেন। সেই পরামর্শ মতো, শিবের শক্তি থেকে মুখ, বসুদেবের শক্তি থেকে হাতের আঙুল, কুবেরের শক্তি বা তেজ থেকে নাক, প্রজাপতির তেজে দাঁত, অগ্নির তেজে ত্রিনয়ন, সন্ধ্যার তেজে ভ্রু, বায়ুর তেজে কান, যমের শক্তিতে চুল, বিষ্ণুর শক্তিতে বাহু, চন্দ্রের শক্তিতে স্তন, ইন্দ্রের শক্তি বা তেজে কোমর, বরুণের তেজে উরু, পৃথিবীর তেজে নিতম্ব, ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, সূর্যের তেজে পায়ের আঙুল এবং অন্যান্য দেবতার শক্তি বা তেজ থেকে দুর্গার জন্ম হয়। পাশাপাশি, আর একটি মত হল - ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের শরীর থেকে বেরনো আগুনের মতো তেজরশ্মি এক হয়ে বিশাল এক আগুনের গোলায় পরিণত হয়। ঐ গোলা বা আলোকপুঞ্জ থেকে আবির্ভূত হয় এক দেবী মূর্তি। সেই দেবীই হলেন দুর্গা।




‘দুর্গা’ শব্দের সন্ধি বিশ্লেষণ হল- দুর+গম্+অ+আ = দুর্গা
‘দুর্গা’ শব্দের ব্যুত্পত্তিগত অর্থ হল দুর‍্ অর্থাৎ দুঃখ। গম্ অর্থাৎ গমন করা বা জানা+অ = দুর্গ+আ(স্ত্রী) = দুর্গা। অর্থাৎ যাঁকে দুঃখে জানা যায় বা দুঃখের মধ্যে দিয়েও যাঁকে পাওয়া যায় তিনিই দুর্গা। এই দুঃখের নাম তপস্যা।

দুর্গা শব্দকে ভাঙলে দাঁড়ায় দ+উ+র+গ+অ+আ। ‘দ’ মানে দৈত্যবিনাশী, ‘উ’-কার বিঘ্নবিনাশী, ‘র’ রোগবিনাশী, ‘গ’ অক্ষর পাপবিনাশী এবং ‘অ’-কার ভয় বা শত্রুবিনাশী। অর্থাৎ দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়ের হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন তিনিই দুর্গা। যিনি অগম্যা বা যাঁকে সহজে গমন করা যায় না বা পাওয়া যায় না বা জানা যা না, তিনিই দুর্গা। যিনি দুর্গ নামে দৈত্যকে দমন করেন, তিনিই দুর্গা। মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এ আছে, ‘দুর্গাসি দুর্গ ভবসাগর-নৌ-রসঙ্গ’। যার অর্থ, দুর্গা হলেন দুর্গম ভবসাগরে ভাসমান নৌকার মতো। 

মহিষাসুর বধ সংক্রান্ত কাহিনিতে বলা হয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধ করার পরে দশম দিনে তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেন দেবী দুর্গা। মার্কণ্ডেয় পুরাণ ও কালিকা পুরাণ অনুযায়ী, পুরুষদের অবধ্য মহিষাসুরকে তিন বার বধ করেন দুর্গা৷ প্রথম বার অষ্টদশভূজা উগ্রচণ্ডা রূপে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার দশভূজা দুর্গারূপে৷ শাস্ত্রে আছে, রাতে স্বপ্নে ভদ্রকালীর মূর্তি দেখে মহিষাসুর বলেন, ‘মা, আপনার হাতে মৃত্যুবরণ করতে আমার দুঃখ নেই৷ কিন্তু আমিও যেন আপনার সঙ্গে পুজিত হই, তার ব্যবস্থা করবেন।’ দেবী বলেন, ‘উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী ও দুর্গা -এই তিন মূর্তিতে তুমি সব সময় আমার পায়ের নীচে থাকবে এবং দেবতা, মানুষ ও রাক্ষসদের পূজা পাবে।’ সত্যযুগে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য দুর্গা মূর্তি তৈরি করে তিন বছর পুজো করেন, ত্রেতাযুগে রাবণ চৈত্রমাসে বাসন্তী পুজো করতেন৷ রাবণ বধের জন্য রামচন্দ্র করেন শারদীয়া পুজো বা অকাল বোধন।




দুর্গার ১০৮টি নাম। দশট হাত। তিনটি চোখ। দেবী দুর্গা ত্রিনয়না বলে তাঁকে ‘ত্রৈম্বক্যে’ বলা হয়। তাঁর বাম চোখ হল বাসনা বা চন্দ্র, ডান চোখ কর্ম বা সূর্য এবং কপালের চোখ হল জ্ঞান বা অগ্নি। দুর্গার দশ হাত দশ দিক - পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশাণ, অগ্নি, ণৈরিত, বায়ু, ঊর্ধ্ব এবং অধঃকে রক্ষা করারও প্রতীক।

সনাতনধর্মী বাঙালি দুর্গার যে মূর্তি পুজো করে, তার শাস্ত্রসম্মত নাম মহিষাসুরমর্দিনী-দুর্গা। দুর্গা, মহিষমর্দিনী, শূলিণী, পার্বতী, কালিকা, ভারতী, অম্বিকা, গিরিজা, বৈষ্ণবী, কৌমারি, বাহারী, চণ্ডী, লক্ষ্মী, উমা, হৈমবতী, কমলা, শিবাণী, যোগনিদ্রা প্রভৃতি নামে ও রূপেও দুর্গার পূজা হয়।


No comments:

Post a Comment

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...