Tuesday, October 31, 2017

Shimla to Manali in a car - 1

মানালির পথে - ১

সিমলা থেকে ‘সুইজারল্যান্ড’!



আগে যা যা লিখেছি -
সিমলার ডায়েরি (প্রথম দিন): মল রোড, দ্য রিজ, লোয়ার বাজার, গর্টন ক্যাসেল, স্টেট মিউজিয়াম
সিমলার ডায়েরি (দ্বিতীয় দিন): অভয়ারণ্যে কৃষ্ণসার… কুফরির ঘোড়া… বিশ্বের দীর্ঘতম হনুমান মূর্তি!
সিমলার ডায়েরি (তৃতীয় দিন): ভাইসরিগ্যাল লজ... মাশোবরার আপেল বাগান... পাহাড়ের মাথায় গল্ফগ্রিন...!!!


৩ দিনের সিমলা সফর শেষ।
সিমলার কথাটি ফুরোল ঠিকই কিন্তু গল্পের নটে গাছটি মুড়োল না।

আজ আমাদের গন্তব্য মানালি। ভারতের ‘সুইজারল্যান্ড’। সিমলা থেকে মানালি- হিমাচল প্রদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন পথ। সড়ক পথে দূরত্ব ২৬৫ কিলোমিটার। ছোট গাড়িতে ৮-৯ ঘণ্টার যাত্রা। ভাড়া লাগে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। সরকারি বা বেসরকারি বাসও আছে। সময় একই রকম লাগলেও বাসে খরচ অনেক কম। কিন্তু পাহাড়ি পথের মনোরম জার্নিটা উপভোগ করতে পারবেন না। পারবেন না, মানালি যাওয়ার পথের দেখার জায়গাগুলো নিজের মতো করে দেখতে।

আগের লেখাতেই বলেছি, আমাদের গাড়ি ভাড়া করা ছিল। বেরনোর কথা, সকাল সাড়ে ৯টা। জ্যামে আটকে পড়ায় গাড়ি এল পৌনে দশটায়। আমরা সকালের খাবার খেয়ে তৈরিই ছিলাম। দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম।




ডিসেম্বরের সকাল। তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রি হবে। কিন্তু এবার এখনও সিমলায় বরফ পড়েনি। মানালিতে তুষার-ভাগ্য সদয় হবে কি না গেলেই বোঝা যাবে। গাড়ির জানালার বাইরে ঝকঝকে নীল আকাশ। রাস্তার দু’ধারে তরঙ্গায়িত পাহাড়ের সারি। পাহাড়ের মাথায় বরফের মুকুট। ঢাল বেয়ে জমে থাকা বরফের চাদর। আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ পাইন, ওক আর দেবদারু গাছ। আশেপাশে বয়ে চলা পাহাড়ি নদী। অকৃপণ প্রকৃতি। ক্যামেরার লেন্স খুললেই ফ্রেম। ক্লিক করলেই পিকচার পোস্টকার্ড। সিমলা থেকে যত সকাল সকাল বেরোতে পারবেন, ততই ভাল। কারণ, তাহলে অন্ধকার হওয়ার আগেই পৌঁছে যেতে পারবেন। চালক আশ্বস্ত করলেন, আমাদের খুব একটা দেরি হয়নি।

পাহাড় কুঁদে তৈরি হয়েছে মসৃণ পথ। একদিকে এবড়োখেবড়ো খাড়াই পাহাড়ি দেওয়াল, অন্যদিকে খাড়াই খাদ। দূরে খাদের ধারে কারও চার দেওয়ালের বাড়ি, নকশাকাটা চাষের জমি। নির্জন, নিস্তব্ধ পাহাড়ের কোলে মানুষের ঘরকন্না। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে তাঁরা খাদের কিনারায়। জীবনে এখানে খাদ আছে ঠিকই কিন্তু খেদ নেই। জীবনে এখানে নির্ঝর আছে, নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ আছে -

‘এত কথা আছে     এত গান আছে
এত প্রাণ আছে মোর,
এত সুখ আছে      এত সাধ আছে
প্রাণ হয়ে আছে ভোর।’
(নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)





দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। পেরিয়ে গেল অনেকটা পথ। টের পেলাম, পেট বলছে,
‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়...’
পূর্ণিমা চাঁদ নয়। মাথার ওপর দুপুরের সূর্য। গায়ে রাখা যাচ্ছে না গরম পোশাক। রাস্তার পাশে একটা ধাবায় থামলাম আমরা।

দুপুরের খাবার খেয়ে আবার চলা শুরু...
অতীতে মানালির নাম ছিল মানালিসু। ঋষি মনু বাস করতেন বিয়াস বা বিপাশা নদীর তীরে। এক বিপাশাকে নিয়ে আরেক বিপাশার সঙ্গে দেখা হল মান্ডিতে গিয়ে। এক বিপাশা আমার স্ত্রী, আরেক বিপাশা হল নদী।
‘আকাশে রৌদ্রের রোল, নদী, মাঠ, পথে বাতাস
সেই স্বার্থ বুকে নিয়ে নিরুপম উজ্জ্বলতা হ’ল;
শূন্যের সংঘর্ষ থেকে অনুপম হ’ল নীলাকাশ...’
(বিপাশা- জীবনানন্দ দাস)




মান্ডি হিমাচল প্রদেশের একটি ছোট্ট শহর। সিমলা থেকে দূরত্ব প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। ঘড়িতে তখন আড়াইটে। কোথা দিয়ে এতটা পথ পেরিয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। ক্যামেরার ভিউফাইন্ডার থেকে চোখ যেন সরতেই চাইছে না। বিশেষ করে, বিপাশা সঙ্গী হওয়ার পর।

মান্ডি থেকে বিপাশা বইতে লাগল আমাদের ডান দিকে। এখান থেকেই যেন শুরু প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের প্রকাশ। শুধু বিপাশা নয়, সিমলা থেকে মানালি যাওয়ার পথে অনেকগুলো দেখার জায়গা আছে।(সুন্দরনগর লেক, মান্ডি, কুলু, পান্ডো ড্যাম, হানোগি মাতার মন্দির)। সেগুলি সম্পর্কে পরের লেখায় বলব। হানোগি মাতার মন্দির পার হওয়ার ২২ কিলোমিটার পর অট টানেল। Longest & DEADLIEST road tunnel in India....!!  প্রায় ৩ কিলোমিটার লম্বা, প্রায় অন্ধকার রোড টানেল! ভয়ঙ্কর সুন্দর যাকে বলে!

অট টানেল পার হওয়ার পরই শুরু হল কুলু জেলা। ঘড়িতে বিকেল প্রায় চারটে। এখান থেকে কুলু ২৯ কিলোমিটার, মানালি ৬৯। কুলু এলাকা শুরু হতেই রাস্তার দু’পাশে চোখে পড়তে লাগল অসংখ্য শালের দোকান। সিমলা-কুলু-মানালি গেলে কুলু শাল কিনতে ভুলবেন না। আর কিনবেন আপেলের রস। গাছে আপেল দেখতে না পেলে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটবে। যা কিছুই কিনুন না কেন দরদাম করে কিনবেন।




রোদটা অদ্ভূত রকম সোনালি হয়ে উঠেছে। গোধূলির কনে দেখা আলোয় পাহাড়ের মাথাগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে সোনার। সোনালি পাহাড় আমাদের সঙ্গে চলেছে গাড়ির পাশে পাশে। সরে সরে যাচ্ছে দোকান-বাড়ি-গাছপালা। কিন্তু বেশিক্ষণ আর এই দৃশ্য উপভোগ করা গেল না। ঝুপ করেই যেন দিগন্তে ডুব দিল সূর্য। নেমে এল অন্ধকার। পাহাড়ি এলাকায় এমনই হয়। বাইরের হাওয়াটা বেশ ঠান্ডা। জানালার কাচ আর খুলে রাখা গেল না।

ঘড়ির কাঁটা বলছে, ৫টা ৪৫। অট টানেলের সেই অন্ধকার এখন সবখানে। জ্বলে উঠেছে গাড়ির হেডলাইট। মানালি আর আধ ঘণ্টার রাস্তা। কিন্তু অন্ধকার নেমে যাওয়ায় আমা্দের লাগল ৪৫ মিনিটের মতো। আসলে, আসার সময় বেশ কয়েকটা জায়গায় অনেকটা সময় কেটেছে আমাদের। তাই এই দেরি। সন্ধে ৬টা ২৪-এ মানালির সঙ্গে দেখা হল আমাদের।

ভয়ঙ্কর সুন্দর পথ...! ছবি - লেখকের তোলা
সিমলা-কুলু-মানালি:এক নজরে
সড়ক পথে  - ২৬৫ কিলোমিটার
আকাশ পথে - ১২৮ কিলোমিটার
বিমানবন্দর - কুলু
সিমলার এসটিটি কোড - ০১৭৭
কুলু-মানালির এসটিডি কোড - ০১৯০২

কীভাবে যাবেন -
হাওড়া থেকে কালকা চলুন ১৩১১ কালকা মেল-এ। সন্ধে ৭টা ৪০-এ ছাড়ে, কালকা পৌঁছয় তৃতীয় দিন ভোর ৪টেয়। কালকা থেকে সিমলা চলুন শিবালিক  এক্সপ্রেসে(পড়ুন - ‘শিবালিক’-এ সূর্যোদয়: হিমালয়ের কোল বেয়ে খেলনা ট্রেনে কালকা থেকে সিমলা)। সিমলা থেকে ছোট গাড়িতে মানালি। হিমাচল প্রদেশ ট্যুরিজম  ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন-এর বাস রয়েছে। রয়েছে বেসরকারি বাসও। গাড়ির তুলনায় বাসে খরচ অনেক কম। কলকাতা থেকে নয়াদিল্লি হয়েও যেতে পারেন মানালি। দিল্লি থেকে সড়কপথে মানালির দূরত্ব ৫৫০ কিলোমিটার। সময় লাগে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা।

কোথায় থাকবেন -
থাকার জন্য মানালি মল রোডের মতো আদর্শ জায়গা আর হয় না। এখানে বিভিন্ন দামের অসংখ্য হোটেল পাবেন। পাবেন ডিলাক্স বা লাক্সারি হোটেলও। তবে যাওয়ার আগে বিভিন্ন সাইটে একটু খোঁচ-খবর করে নিলে ভাল হয়। চাইলে অনলাইন বুকিং অথবা মানালি পৌঁছে দরদাম করে পছন্দ মতো হোটেলে চেকইন।

যোগাযোগের ঠিকানা-
হিমাচল পর্যটন, ১বাই ১এ, বিপ্লবী অনুকূলচন্দ্র স্ট্রিট, কলকাতা - ৭২


No comments:

Post a Comment

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...