Sunday, November 5, 2017

What is Rasa-Lila of Radha-Krishna?

আজ রাস পূর্ণিমা৷ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ দিন, বিশেষ তিথি। এই তিথিতেই ব্রজভূমির গোপিনীদের কাছে ধরা দিয়েছিলেন তাঁদের প্রাণের কানাই৷ দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোর পর ফের উত্‍সবে মাতোয়ারা দেশ। হর্ষচরিতের টীকাকার শঙ্করের মতে, রাস হল এক ধরণের বৃত্তাকার নাচ যা ৮, ১৬, বা ৩২ জনে সম্মিলিতভাবে উপস্থাপনা করা হয়। বহু নৰ্তকীযুক্ত নৃত্য বিশেষের নাম রাস- ‘রাসো নাম বহু নৰ্ত্তকীযুক্তে নৃত্যবিশেষঃ।’

বস্ত্র হরণ...। সৌজন্যে - গুগল ইমেজ
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ অনুযায়ী, বস্ত্র হরণের দিনই গোপিনীদের কাছে কৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি রাসলীলা করবেন-

‘যখন করেন হরি বস্ত্ৰহরণ।
গোপীদের কাছে তিনি করিলেন পণ।।
আগামী পূর্ণিমাকালে তাঁহাদের সনে।
করবেন রাসলীলা পুণ্য বৃন্দাবনে।।’

শ্রীকৃষ্ণের দ্বাদশ যাত্রার অন্যতম রাসযাত্রা৷ এক দিকে আকাশে অতিকায় চাঁদ। অন্যদিকে, ক্যালেণ্ডারের পাতায় কার্তিক-পূর্ণিমা। যে পূর্ণিমার খ্যাতি রাস পূর্ণিমা হিসেবে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিন বৃন্দাবনে রাধার সঙ্গে রাস উৎসবে মেতে উঠেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। গোপিনীরা কৃষ্ণকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য কাত্যায়নীর আরাধনা করেছিলেন৷ এই রাস পূর্ণিমাতেই গোপিনীদের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে ‘যতজন গোপিনী, ততজন কৃষ্ণ’ হয়ে গোপিনীদের মনের ইচ্ছাপূরণ করেন শ্রীকৃষ্ণ। গোপিনীদের নাচ ও শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে বৃন্দাবন। পরবর্তীকালে রাধা-কৃষ্ণের এই মিলন উৎসবকে নাম-সংকীর্তনের মধ্যে দিয়ে রাস মহোৎসবে পরিণত করেন শ্রীচৈতন্যদেব। শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, কেউ যদি তাঁকে জানতে চায়, তবে তাঁকে ভক্তির আশ্রয়ে থাকতে হবে। বৈষ্ণব ভক্তরা তাই এদিনে ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মেতে ওঠেন রাসলীলায়। ফলে গোপীরা জাগতিক ক্লেশ থেকে মুক্তিলাভ করেন। চরাচরে রাস উৎসবের প্রচলন হয়।



মথুরা, বৃন্দাবনের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নবদ্বীপ, মায়াপুর, কোচবিহারের মদনমোহনপাড়া ওড়িশা, অসম, মণিপুর এমনকী প্রতিবেশী বাংলাদেশে মহা সমারোহে পালিত হয় রাস উৎসব। পঞ্জাবসহ ভারতের নানা প্রান্তে গুরুদ্বারে পালন করা হয় শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানকের জন্মবার্ষিকী। শ্রীবিষ্ণু ও শিব ভক্তরাও এদিন মন্দিরে গিয়ে তাঁদের আরাধ্যদেবতার পুজো করেন। পুণ্য অর্জনের জন্য মন্দিরে প্রদীপ জ্বালান, দুঃস্থদের দান করেন। অন্যদিকে, আজকের দিনেই জন্মগ্রহণ করেন, জৈন তীর্থঙ্কর পরেশনাথ। সেই উপলক্ষ্যে এদিন উত্তর কলকাতায় বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করে শোভাযাত্রা।

দীপাবলির ঠিক পরের এই পূর্ণিমাতেই দেবদীপাবলি পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্বাস, এইদিন ঈশ্বর মর্ত্যে নেমে আসেন গঙ্গা স্নান করতে। তাই এইদিন আলোর মালায় সাজানো হয় গঙ্গার ঘাট। দেবদীপাবলি উপলক্ষে সন্ধ্যায় প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয় হরিদ্বার ও বেনারসের ঘাট।




প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার নবদ্বীপে মহা সমারোহে পালিত হয় রাস উৎসব। বৈষ্ণব ও শাক্তদের মিলন উৎসব হিসেবেই পরিচিতি এই উৎসবের। চিরাচরিত প্রথা মেনে পুজো করা হয় প্রায় ৩০০ দেবদেবীর। সকাল থেকে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।

কোচবিহারের মদনমোহনবাড়ির রাস উত্‍সব ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো। ১৮১২ সালে রাজা হরেন্দ্রনারায়ণের হাত ধরে শুরু হয় এই রাস উত্‍সবের। রাজ পরিবারের কুলদেবতা মদনমোহনকে কেন্দ্র করে উৎসব হয় মদনমোহনবাড়িতে। প্রাসাদ থাকলেও রাজপরিবারের কোনও সদস্য এখন আর নেই। তাই প্রথা অনুযায়ী, সন্ধ্যায় মদনমোহন মন্দিরে রাসচক্র ঘুরিয়ে উত্‍সবের সূচনা করেন দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি তথা জেলাশাসক।




মণিপুরিদের সব থেকে বড় উৎসব রাস পূর্ণিমা। তাঁদের কাছে রাস একটি প্রধান ধর্মীয় নৃত্য-গীতের উৎসব। কথিত আছে, ১৭৭৯ সালে রাজা ভাগ্যচন্দ্র একদিন স্বপ্নে দেখতে পান রাধা-কৃষ্ণের রাসলীলা। তারপর তিনি কয়েকজন কুমারী মেয়েকে দিয়ে স্বপ্ন যেমন দেখেছিলেন, তেমনভাবে রাসলীলা করান। নিজের মেয়ে কুমারী বিশ্বাবতীকে শ্রীরাধা এবং মন্দিরের শ্রীগোবিন্দকে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় অবতীর্ণ করে রাসলীলা করেন এবং রাজা নিজে বাজান মৃদঙ্গ। তাতে তিনি নিজস্ব তাল ব্যবহার করেন। সে তালই এখন পর্যন্ত চলে আসছে রাসলীলায়।

রাসপূর্ণিমার দিন থেকে তিনদিন ধরে চলে গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণের লীলা৷ কথিত আছে, সূর্যকন্যা ও যমের বোন যমুনা ষাট হাজার বছর তপস্যা করে কৃষ্ণলীলার সাক্ষী থাকতে পেরেছিলেন৷ সেই যমুনার পাড়েই কদমবনে পূর্ণিমার আলো গায়ে মেখে মহারাসলীলায় অবতীর্ণ হন শ্রীকৃষ্ণ৷ মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় গোপিনীদের৷ অবশেষে তৃতীয় রাতে ভাঙা রাস দিয়ে শেষ হয় উত্‍সব।


No comments:

Post a Comment

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...