Tuesday, August 8, 2017

Rabindranath Tagore's House in Shillong

‘শেষের কবিতা’র শিলং...

ছবি - লেখকের তোলা

‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি,

আমরা দু’জন চলতি হাওয়ার পন্থী...’

শিলং মানে ‘শেষের কবিতা’। শিলং মানে নস্টালজিয়া বাঙালির।

অফিস থেকে ক’দিনের ছুটি নিয়ে হঠাৎ‍ হাজির শিলং-এ। সেই শিলং, যেখানে বেড়াতে গিয়ে এক মোটর দুর্ঘটনায় জীবন অন্য খাতে বয়ে গিয়েছিল বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার, রোমান্টিক যুবক অমিট্ রে-র। পরিচয় হয়েছিল লাবণ্যর সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম। কিন্তু অমিত-লাবণ্যর বিয়েটা যখন অনিশ্চয়তার দোলাচলে, তখন শিলং-এ হঠাত্‍ হাজির কেটি। আঙুলে অমিতের দেওয়া আংটি। দাবি, অমিত তাঁর। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে লাবণ্যর। অমিট্ স্বীকার করে, ‘লাবণ্যর সঙ্গে তার প্রেম যেন ঝরনার জল, প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য নয়। আর কেতকীর সঙ্গে সম্পর্ক ঘড়ায় রাখা জল- প্রতিদিন পানের জন্য।…’

মেঘালয় বিধানসভা ভবনের পাশে ব্রুকসাইড বাংলো
এখন ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর্ট গ্যালারি’। ছবি - লেখকের তোলা
১৯১৯ সালের অক্টোবরে শিলং গিয়ে রিলবং-এ উম-শির্পি নয়ানজুলির তীরে কে সি দে-র ব্রুকসাইড বাংলোয় উঠেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মেঘালয় বিধানসভা ভবনের পাশে ব্রুকসাইড বাংলো এখন ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর্ট গ্যালারি’। ঢোকার রাস্তার দু’ পাশে বড় বড় দেবদারু গাছ। গাছগুলো রবীন্দ্রনাথের সময়কার। আর্ট গ্যালারির সামনে কবিগুরুর পূর্ণাবয়ব মূর্তি। দেখলেই শ্রদ্ধায় মাথা নিচু হয়ে আসে। মূর্তিটি অবশ্য বসানো হয় ২০১১ সালে। গ্যালারির ভেতরে রবীন্দ্রনাথের খাট-বিছানা, ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিল, ফায়ার প্লেস, অসংখ্য ছবি, ‘শেষের কবিতা’র পাণ্ডুলিপি।




চার বছর পর ১৯২৩ সালে ফের শিলং গিয়ে রবীন্দ্রনাথ উঠেছিলেন রিলবং-এর জিৎভূম-এ। এখানে বসেই তিনি লিখেছিলেন ‘রক্তকরবী’, ‘শিলঙের চিঠি’ প্রভৃতি। ‘যোগাযোগ’ উপন্যাস লেখার সূচনাও এখান থেকে। ‘রক্তকরবী’ যখন লেখেন, প্রথমে তার নাম ছিল ‘যক্ষপুরী’, ‘যোগাযোগ’-এর নাম ‘তিন পুরুষ’। ‘যোগাযোগ’ শেষ করেই রবীন্দ্রনাথ আরম্ভ করেন ‘শেষের কবিতা’ লেখা। বেশ কিছু অনুবাদের কাজও এখানে করেন কবি।


তবে এখন আর সেই ‘জিত্‍ভূম’ অক্ষত নেই। মালিকানা বদলেছে, বাড়ির আদল বদলেছে। তবে বাড়িতে ঢোকার মুখে বসানো আছে স্মারক। তাতে উল্লেখ, ১৯২৩ সালে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এখানে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। স্মারকে ‘জিৎভূম’ হয়ে গিয়েছে ‘জিৎভূমি’। স্মারককে ডান দিকে রেখে ঢুকলেই সামনে বিশাল সুন্দর বাগান। বাগানঘেরা জিৎভূমি আর ব্রুকসাইড বাংলোর দিনযাপনের স্মৃতি থেকেই ১৯২৮ সালে জন্ম ‘শেষের কবিতা’র। ‘শেষের কবিতা’য় অনেক বর্ণনা আছে জিৎভূমির।

শিলংয়ে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত আরেকটি বাড়ি লাইতুমখারার আপল্যান্ডস-এ সলোমন ভিলা বা সিধলি প্যালেস। তবে এখন আর তা নেই।





কখন যাবেন-
শিলং যাওয়া যায় সারা বছরই। এখানে উষ্ণতার সারণি দিলাম, আপনার পছন্দের সময় বেছে নিন
গ্রীষ্ম(এপ্রিল থেকে জুন) তাপমাত্রা থাকে ১৫-২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড
বর্ষা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) তাপমাত্রা থাকে ১৫-২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড
শীত (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) তাপমাত্রা থাকে ৪-১৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড

কীভাবে যাবেন-
বাস ট্রেন বা উড়ান- দিল্লি থেকে মেঘালয় যাওয়া যায় তিন ভাবেই। নয়াদিল্লি থেকে গুয়াহাটি হয়ে খুব সহজেই যাওয়া যায় মেঘালয়। দিল্লি থেকে ট্রেনে গুয়াহাটি প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার। গুয়াহাটি থেকে মেঘালায় ১৮০ কিলোমিটার। গুয়াহাটি থেকে বাস কিম্বা গাড়িতে যাওয়া যায় শিলং। আকাশপথে যেতে চাইলে নয়াদিল্লি থেকে সরাসরি শিলং-এর বিমান পাবেন। যেতে পারেন গুয়াহাটি হয়েও। গুয়াহাটি থেকে শিলং-এর আকাশ দূরত্ব ১৫৯ কিলোমিটার।

কীভাবে ঘুরবেন-
নিজে গাড়ি ভাড় করতে পারেন। আছে মেঘালয় ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের বাসও।

কোথায় থাকবেন-
থাকার জন্য শিলং পুলিশ বাজার এলাকাটাই সব থেকে ভাল। অনেক হোটেল আছে। নিজের পছন্দ ও ক্ষমতা মতো বেছে নিলেই হল।




যোগাযোগের ঠিকানা-
The Directorate of Tourism 
3rd Secretariat Nokrek Building,
Lower Lachumiere,
Shillong 793001,
Meghalaya, India 
Tel Fax: +91-364-2502580
Phone no: +91-364 2502166/2500736
E-mail: meghtourism@gmail.com


No comments:

Post a Comment

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...