Monday, December 4, 2017

End of a Bengali Folk Era...Kalachand Darbesh passes away!


প্রয়াত কিংবদন্তী কালাচাঁদ, 
শেষ সুর থেমে গেল দরবেশের...!



'প্রকৃত মানুষ ধরিয়া মানুষ হইও'
ছোটবেলায় শোনা বাবার পুরনো এই আদেশ একদিন নতুন করে শুনতে পেলেন কালাচাঁদ।
তখন তিনি ধূপগুড়ির একটি স্কুলের শিক্ষক।

আর দু’বার ভাবেননি। চাকরি ছেড়ে, ঘর-সংসার সব ছেড়ে পথে বেরিয়ে পড়েন কালাচাঁদ দাস। ‘প্রকৃত মানুষ’ ধরতে। বছর পাঁচেক ভারতের নানা অঞ্চলে ঘুরে বহু মানুষের মাঝে এক সময় দেখা পান সেই 'প্রকৃত মানুষ’ রাধাচরণ দরবেশের। তাঁকেই গুরু বলে মানেন কালাচাঁদ। তাঁর কাছে গান শিখতে শুরু করেন ও পরে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে কালাচাঁদ দাস হয়ে ওঠেন কালাচাঁদ দরবেশ। তাঁর সেই ‘প্রকৃত মানুষ’ ধরার সাধনা শেষ হল রবিবাসরীয় সকালে। চলে গেলেন বাংলার দরবেশি গানের শেষ কাণ্ডারি। ৩ ডিসেম্বর সকালে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির গোবিন্দপল্লির বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন কালাচাঁদ দাস, যিনি পরিচিত ছিলেন কালাচাঁদ দরবেশ নামে।




১৯৬৪ সালে পূর্ববঙ্গ থেকে চলে আসেন কালাচাঁদ। ছোটবেলায় এখানওখান ঘুরে শেষমেশ থিতু হওয়া জলপাইগুড়িতে। আনন্দচন্দ্র কলেজ থেকে স্নাতক। ধূপগুড়ির স্কুলে শিক্ষকতা শুরু। এক সময় ধূপগুড়ির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকও ছিলেন কালাচাঁদ। তখনই একদিন স্বপ্নে শুনতে পান বাবার নির্দেশ। সেই নির্দেশ মেনেই, ৪০ বছর বয়সে দরবেশি ধারার জগতে প্রবেশ করেন তিনি।

দরবেশি গানের পরম্পরা কয়েকশো বছরের। দরবেশ সঙ্গীত বাংলার অতি প্রাচীন সম্পদ। অনুমান করা হয়, শ্রীচৈতন্য-পরবর্তী ভক্তি আন্দোলনের কালে জন্ম নেয় বৌদ্ধ-বৈষ্ণব-সুফিবাদের এই যৌথ সাধন ধারা। ভারতে একদা অত্যন্ত জনপ্রিয় দরবেশি গান এখন লুপ্ত প্রায়। ক’বছর আগে পর্যন্তও, তাঁকে দেখা গিয়েছে ট্রেনে উঠে গান শোনাতে, মাধুকরী করতে। কালাচাঁদের মৃত্যুতে সেই সাধনধারা লোপ পেল বলে মনে করছেন লোক সংস্কৃতি ও গৌণধর্মের গবেষকরা।

খবরের কাগজের এক কোণে। ছবি - লেখকের তোলা
বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন অনেক দিন ধরে। শ্বাসকষ্ট ও কিডনির রোগে শেষ কিছু দিন শয্যাশায়ী ছিলেন জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির বাড়িতেই। শনিবার সকালে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নিয়ে যাওয়া হয় ধূপগুড়ি হাসপাতালে, সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তারপর ফিরিয়ে আনা হয় বাড়িতেই। সেখানেই মারা যান তিনি। 

জীবনভর সম্মান, স্বীকৃতি কম পাননি। সারা বাংলা তো বটেই, কালাচাঁদের গানে মোহিত হয়েছে সারা বিশ্ব। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ফ্রান্স থেকে শুরু করে মরক্কো- অনেক দেশে আপ্যায়িত হয়েছেন, গান শুনিয়েছেন, শুনিয়েছেন দরবেশি দর্শনের কথা। অসামান্য কণ্ঠের অধিকারী কালাচাঁদ ১৯৮৯-এ কাজ করেছেন পণ্ডিত রবিশংকরের সঙ্গে। ১৯৯০ সালে লন্ডনের ‘ভারত মেলা’য় কালাচাঁদের সঙ্গে সঙ্গত করেন উস্তাদ জাকির হুসেন। সেই অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। ওই বছরই ব্রিটেনের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটিতে দরবেশি গান, দরবেশি জীবনযাপন এবং দর্শন নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ করেন কালাচাঁদ, বক্তৃতাও দেন। ২০১৩-য় তাঁকে ‘নজরুল পুরস্কার’ দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ওই বছরই পান সহজিয়া ফাউন্ডেশনের ‘সহজিয়া সম্মান’। কালাচাঁদের জীবন নিয়ে আছে একটি পূর্ণদৈর্ঘের তথ্যচিত্র।

কিন্তু এ সবও বদলাতে পারেনি তাঁর অনাড়ম্বর জীবনযাপনকে। বিচ্যুত করতে পারেনি তাঁর সাধনার পথ থেকে।



No comments:

Post a Comment

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...