মানালির পথে - ৩
বিপজ্জনক সুড়ঙ্গের অন্ধকারে
ভয়ঙ্কর সুন্দর সেই ৪ মিনিট!!
মধ্যদিনের রক্ত-নয়ন অন্ধ করিল কে!
ধরণীর ‘পরে বিরাট ছায়ার ছত্র ধরিল কে!
মনে পড়ে গেল কবি মোহিতলাল মজুমদারের ‘কালবৈশাখী’ কবিতাটা। না, কোনও কালবৈশাখী নয়, আমাদের যাত্রাপথে ‘অন্ধকার বিদিশার নিশা’ নামিয়ে এনেছিল একটা টানেল।
হানোগি মাতা মন্দির থেকে পথ চলা শুরুর একটু পর থেকেই লক্ষ্য করলাম, রোদের রংটা কেমন সোনালি হয়ে এসেছে। চালক বললেন, এখনই তো সন্ধে নামবে। কথাটা শুনে কেমন হেঁয়ালি বলে মনে হল। পরে নিজেই ভেঙে বললেন, এবার আমরা অট টানেলে ঢুকব। যেখানে ঢুকলেই মনে হবে সন্ধে নয়, রাত্রি নেমেছে হঠাৎ করে।
হানোগি মাতার মন্দির থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অট টানেল। পৌঁছতে প্রায় পৌনে চারটে বেজে গেল। টানেলে ঢোকার ঠিক আগে ডানদিকে যে রাস্তাটা চলে গিয়েছে, সেটা আপনাকে নিয়ে যাবে জালোরি পাস, সেখান থেকে সিমলা জেলার রামপুর। বিশাল পাহাড় ফুঁড়ে তৈরি করা হয়েছে ২.৮ কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গ দেখে মনে পড়ে গেল সিমলার রাস্তায় সেই ব্যারগ টানেলের কথা। এই টানেলটা তৈরি করতেও কি ব্যারগ সাহেবের মতো কাউকে বেগ পেতে হয়েছিল? কী জানি!
পৃথিবীর যে সব সুড়ঙ্গ সবচেয়ে বিপজ্জনক, অট টানেল সেগুলির একটি। ভারতের সবচেয়ে লম্বা রোড টানেল। লম্বা সুড়ঙ্গ পথ দু’লেনের। এক সুড়ঙ্গ দিয়ে দু’দিকের গাড়ি চলে। সব থেকে ভয়ের, মাঝে তেমন কোনও ডিভাইডার নেই। নেই স্পিড ব্রেকার। নেই পুলিশি নিয়্ন্ত্রণ। অট টানেলের ভিতরে ঢুকতেই সব অন্ধকার। টানেলের দেওয়ালে কয়েকটি বাল্ব টিমটিম করে জ্বলছে। চোখে পড়ছে না কোনও সিসিটিভি বা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। উল্টো দিক দিয়ে হেডলাইট জ্বেলে ছুটে আসছে একের পর গাড়ি। বুকে কাঁপন ধরিয়ে হুশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। পিছন থেকে দ্রুত গতিতে আমাদেরকে ওভারটেক করে গেল কয়েকটা গাড়ি। চালককে বললাম, সাবধানে!
সিমলা থেকে কুলু-মানালি যেতে গেলে চণ্ডীগড়-মানালি জাতীয় সড়কের ওপর এই অট টানেলকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই সুড়ঙ্গপথে প্রশাসনের উদাসীনতা চোখে পড়ার মতো। প্রায় অন্ধকার টানেলে দু’টো বড় বাঁক। উল্টো দিক থেকে হেডলাইট জ্বেলে গাড়ি এসে পড়লে এদিকের চালকের চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য। পদে পদে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। সব থেকে ভয়ঙ্কর বিষয় হল, টানেলের মাঝে দুর্ঘটনা ঘটলে, কোনও গাড়িই কোনও দিকে বেরোতে পারবে না। হিমাচল প্রশাসনের দাবি, টানেলের মধ্যে ৪৯৬টি আলো আছে। যার জন্য বছরে খরচ প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। কিন্তু তারপরেও এত অন্ধকার কেন? এত বিপদসঙ্কুল কেন?
টানেল শেষ হলেই শুরু হয় কুলু জেলা। এখান থেকে কুলু শহর মাত্র ২৯ কিলোমিটার, মানালি ৬৯ কিলোমিটার। টানেল পার হতে লাগল প্রায় ৪ মিনিট। অন্ধকার টানেল থেকে বেরোতেই দিনের আলো। মনের মধ্যে স্বস্তি। রাস্তার দু’পাশে প্রচুর ভাল রেস্তোরাঁ। প্রতিটি রেস্তোরাঁরই বৈশিষ্ট্য হল- সামনে বাগান, লম্বা লন, সারি দেওয়া পাতা খসা আপেলের গাছ। সেখানে বসে চা-বিস্কুটের স্বাদই যেন আলাদা। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মনে হল, অট টানেলের অভিজ্ঞতাটা অসাধারণ, ভয়ঙ্কর সুন্দর!
সড়ক পথে – ২৬৫ কিলোমিটার
আকাশ পথে – ১২৮ কিলোমিটার
বিমানবন্দর – কুলু
সিমলার এসটিটি কোড – ০১৭৭
কুলু-মানালির এসটিডি কোড – ০১৯০২
![]() |
টানেল শেষ...শুরু কুলু জেলা...। ছবি - লেখকের তোলা |
কীভাবে যাবেন –
হাওড়া থেকে কালকা চলুন ১৩১১ কালকা মেল-এ। সন্ধে ৭টা ৪০-এ ছাড়ে, কালকা পৌঁছয় তৃতীয় দিন ভোর ৪টেয়। কালকা থেকে সিমলা চলুন শিবালিক এক্সপ্রেসে(পড়ুন – ‘শিবালিক’-এ সূর্যোদয়: হিমালয়ের কোল বেয়ে খেলনা ট্রেনে কালকা থেকে সিমলা)। সিমলা থেকে ছোট গাড়িতে মানালি। হিমাচল প্রদেশ ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন-এর বাস রয়েছে। রয়েছে বেসরকারি বাসও। গাড়ির তুলনায় বাসে খরচ অনেক কম।কলকাতা থেকে নয়াদিল্লি হয়েও যেতে পারেন মানালি। দিল্লি থেকে সড়কপথে মানালির দূরত্ব ৫৫০ কিলোমিটার। সময় লাগে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেন –
থাকার জন্য মানালি মল রোডের মতো আদর্শ জায়গা আর হয় না। এখানে বিভিন্ন দামের অসংখ্য হোটেল পাবেন। পাবেন ডিলাক্স বা লাক্সারি হোটেলও। তবে যাওয়ার আগে বিভিন্ন সাইটে একটু খোঁচ-খবর করে নিলে ভাল হয়। চাইলে অনলাইন বুকিং অথবা মানালি পৌঁছে দরদাম করে পছন্দ মতো হোটেলে চেকইন।
যোগাযোগের ঠিকানা-
হিমাচল পর্যটন, ১বাই ১এ, বিপ্লবী অনুকূলচন্দ্র স্ট্রিট, কলকাতা – ৭২
- Subscribe: https://www.youtube.com/c/RAJATKANTIBERA
- Blog: http://rajatkb.blogspot.com
- Google Plus: https://plus.google.com/u/0/
- Linkedin: https://www.linkedin.com/in/rajatkanti-bera-275134139/
- Facebook: https://www.facebook.com/rajatkanti.bera
No comments:
Post a Comment