Monday, January 15, 2018

Famous Joydev-Kenduli Mela of Birbhum

আখড়ায় বাউলের সুর, অজয়ে পুণ্যস্নান

মকর সংক্রান্তিতে শুরু বীরভূমের জয়দেব-কেঁদুলি মেলা


ড্রোনের চোখে জয়দেব-কেঁদুলি মেলা, ২০১৮।
পূর্ব্বদিকে হেনকালে উদিলেন ইন্দু, 
দিগঙ্গনা-মুখে যেন চন্দনের বিন্দু, 
উজলি কিরণে বৃন্দাবন-অভ্যন্তর, 
বিকাশিয়া অঙ্কপরে কলঙ্ক-নিকর। 
                                                                                          (গীতগোবিন্দ : সপ্তম সর্গ : নাগর নারায়ণ)


বীরভূমের অজয় নদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কবি জয়দেবের নাম। কথিত আছে, কবি জয়দেব মকর 
সংক্রান্তিতে গঙ্গাস্নান করতে পারেননি৷ কবির জন্য অজয় নদে গঙ্গা প্রবাহিত হয়ে আসে এবং সেখানে তিনি স্নান করেন৷ সেই উপলক্ষ্যে মকর সংক্রান্তিতে ইলামবাজারের কেঁদুলিতে অজয় নদের তীরে আয়োজন করা হয় কেঁদুলি-জয়দেব মেলা বা জয়দেব-কেঁদুলি মেলা। মানুষের বিশ্বাস, জয়দেব আজও মকর সংক্রান্তির দিন কদমখণ্ডির ঘাটে স্নান করেন। সেই বিশ্বাসে লক্ষাধিক মানুষও পুণ্যলাভের উদ্দেশে অজয় নদে স্নান সারেন। ১৯৮২ সালে মেলার দায়িত্ব নেয় বীরভূম জেলা প্রশাসন। সেই সময় ১০৭টি আখড়া থাকলেও বর্তমানে সংখ্যাটি বেড়ে ৬০০-র বেশি। 



বীরভূমের বোলপুর মহকুমার অন্তর্গত অজয় নদের ধারে জয়দেব-কেঁদুলি গ্রাম। কথিত আছে, ‘গীতগোবিন্দ’র রচয়িতা কবি জয়দেব দ্বাদশ শতকে এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও অনেকের মতে, ওড়িশার কেদুঁলির শ্মশানঘাটে তাঁর জন্ম। জয়দেব লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন। এই গ্রামেই জয়দেব প্রতিষ্ঠিত রাধামাধবের মূর্তি পূজিত হয়ে আসছে। যে আসনে বসে জয়দেব সিদ্ধিলাভ করেছিলেন বলে মনে করা হয়, তা সংরক্ষণ করা হয়েছে। মুঘল যুগে জয়দেব-কেঁদুলি সেনপাহাড়ি পরগনার অন্তর্গত ছিল। ঔরঙ্গজেব দ্বারা জারি করা একটি ফরমানের পর পরগনা বর্ধমানের মহারাজা কৃষ্ণরাম রায়ের এলাকাভুক্ত হয়। এই গ্রামের যুগলকিশোর মুখোপাধ্যায় বর্ধমান রাজদরবারের  সভাকবি ছিলেন। মনে করা হয়, তাঁর অনুরোধে বর্ধমানের মহারানি ব্রজকিশোরী ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে কবির জন্মভিটেতে রাধাবিনোদের মন্দির স্থাপন করেন। ১৮৬০-এর দশকে নির্বাক বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের রাধারমণ ব্রজবাসী নির্বাক আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এখানে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে রাধাবল্লভ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বেশ কিছু মন্দির ও আশ্রম পরিবেষ্টিত এই গ্রামটি একটি ধর্মীয় তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। তবে কবি জয়দেবের নামে কেঁদুলির এই মেলার সূচনা কবে, তা নিশ্চিত করে জানা যায় না। প্রাচীনত্ব ও জনপ্রিয়তার নিরিখে এ মেলা আজও দেশের অন্যতম প্রধান মেলা হিসেবে পরিগণিত হয়।

এ মেলা আজও দেশের অন্যতম প্রধান মেলা।

একদিকে, যখন মকরসংক্রান্তি পুণ্যস্নান সাগরসঙ্গমে। অন্যদিকে, তখন বীরভূমের জয়দেব-কেঁদুলিতে অজয় নদে পুণ্যার্থীদের স্নান৷ প্রথা মেনে অজয় নদে স্নান সেরে জয়দেবের মন্দিরে পূজার্চ্চনা সারেন ভক্তরা। রাজ্য রাজ্যের বাইরে থেকে মেলায়  ভিড় জমান অসংখ্য সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলায় আসেন বহু সন্ন্যাসী, বাউল। জমে ওঠে আখাড়া।

অজয় নদে স্নান - 
অজয় নদে স্নান সেরে  বাউল গান
অজয় নদে মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান। এই সময় নদে জল কম থাকে। সেই কারণে প্রতিবছর প্রশাসন থেকে বালি তুলে জল জমানোর ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন ব্যারেজ থেকেও ছাড়া হয় জল। 

আখড়ায় বাউল গান - 
জয়দেব মেলা মানেই বাউল গানের আসর। সেই সঙ্গে কীর্তন। প্রতিবছর এই মেলায় তৈরি করা হয় কীর্তনীয়াদের জন্য কীর্তনের আখড়া এবং বাউলদের জন্য বাউলের আখড়া। সেই আখড়ায় রাত কাটানোটাই আসল মজা। 

কীভাবে যাবেন - 
ট্রেনে বোলপুর স্টেশন। বোলপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে কেঁদুলি যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। অন্যান্য ছোট গাড়িও আছে।


No comments:

Post a Comment

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...