Thursday, March 1, 2018

Bengali Dolyatra/Bengali Dol Purnima/Dol Festival celebrated in Bengal

আবীর থেকে জানি এসব, রঙ থেকে জানি

দু’জন অসাবধানি দোলে, দু’জন অসাবধানি


কেউ বলে ফাগুন৷ কেউ বলে দোলের মাস৷ কেউ বলে সর্বনাশ৷ জাগ্রত দ্বারে মাস ফাগুন। দিগন্তে শিমূল-পলাশের আগুন৷ আজ দোল৷ সবার রঙে রং মেলানোর দিন৷ কেউ মাখায়৷ কেউ মাখে৷ আজ রঙ শরীর-মন-হাতে৷

রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে
রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত-আকাশে
নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল।
দ্বার খোল‌, দ্বার খোল।।

দোলযাত্রা হিন্দু বৈষ্ণব উৎসব। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে হোলি উৎসবের সঙ্গে দোলযাত্রা সম্পর্কযুক্ত। এই উৎসবের অপর নাম বসন্তোৎসব। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
দেখিতে পলাশ ফুল অতি মনোহর...
বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির বা গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীদের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে রঙিন করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তন সহকারে শোভাযাত্রায় বের করা হয়। এরপর ভক্তরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন। দোল উৎসবের জন্য ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমাও বলা হয়। আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমাও বলা হয়।




উত্তর ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন পালিত হয়। হোলি নামটা এসেছে ‘হোলিকা’ থেকে। স্কন্দপুরাণ গ্রন্থের ফাল্গুনমাহাত্ম্য গ্রন্থাংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ ও তাঁর পত্নী দিতির পুত্র হিরণ্যকশিপুর বোন। প্রচণ্ড নিষ্ঠুর ছিল দুই ভাইবোন। হিরণ্যকশিপু ব্রহ্মার কাছে অপরাজেয় থাকার বর পেয়েছিলেন। তাই হিরণ্যকশিপু দেব ও মানব বিজয়ী হয়ে দেবতাদের অবজ্ঞা করতে শুরু করেন। বলত দেবতা নয়, পুজো তাকেই করতে হবে। কিন্তু তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ ছিল বিষ্ণুর ভক্ত। সে তার বাবার আদেশ মানতে রাজি নয়। হিরণ্যকশিপু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। প্রহ্লাদ বিষ্ণুকে বাবার উপরে স্থান দেওয়ায় ক্রুদ্ধ হয়ে হিরণ্যকশিপু নিজের পুত্রকে পুড়িয়ে মারার আদেশ দেন। দাদার আজ্ঞায় হোলিকা প্রহ্লাদকে ভুলিয়েভালিয়ে কোলে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করেন। নিজে গায়ে চাপিয়ে নেয় অগ্নি-নিরোধক শাল। কিন্তু আগুন জ্বলে উঠতেই বাতাসে সেই শাল উড়ে গিয়ে প্রহ্লাদকে ঢেকে ফেলল। অগ্নিদগ্ধ হল হোলিকা। বিষ্ণুর আগমন ঘটল। তাঁর হাতে নিহত হল হিরণ্যকশিপু। ওই আগুন হল অশুভের বিরুদ্ধে শুভের জয়ের প্রতীক। হোলিকা দগ্ধ হওয়ার পরের দিন পালিত হয় হোলি। হোলিকার এই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কাহিনিই দোলের আগের দিনে অনুষ্ঠিত হোলিকাদহন বা চাঁচর উৎসবের সঙ্গে যুক্ত।




এই কাহিনিরই অন্য একটি কথিত রূপ আছে।
হোলিকা ব্রহ্মার কাছ থেকে বর লাভ করেছিলেন, আগুনে তাঁর শরীর পুড়বে না। হিরণ্যকশিপু তার পুত্রের হরিভক্তিতে রুষ্ট হয়ে তাকে অনেক বার মারার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তখন হোলিকা প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য হিরণ্যকশিপুর সঙ্গে এক ষড়যন্ত্র করেন। ঠিক হয় হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে জ্বলন্ত চিতায় বসবেন। প্রহ্লাদ পুড়ে মরবে কিন্তু ব্রহ্মার বর থাকায় হোলিকার কোনও ক্ষতি হবে না। সেই মতো, হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে চিতায় বসলেন। চিতায় আগুন লাগানো হল। প্রহ্লাদ পিসির কোলে বসে ভগবান বিষ্ণুর নাম জপতে থাকলেন। পাহাড় প্রমান আগুন এর শিখা উঠল। কিন্তু প্রহ্লাদের কিছুই হল না। উল্টে হোলিকা পুড়ে ছাই হল। আসলে হোলিকা জানতেন না বর তখনই কার্যকর হবে যদি তিনি একা আগুনে প্রবেশ করে। অন্যথায় তাঁর মৃত্যু হবে। প্রহ্লাদকে চিতা থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন হিরণ্যকশিপু। বিশ্বাসই করতে পারলেন, না হোলিকার মৃত্যু হয়েছে। তাই চিতার ছাই দু’হাত দিয়ে সরাতে সরাতে বলতে লাগলেন, হোলি হ্যায়, হোলি হ্যায়(হোলিকা আছে... হোলিকা আছে...)। সেই থেকেই এই দিনটি হোলিকা দহন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। হোলিকা ছিল দূরাচারী রাক্ষসী তাই তার মৃত্যুতে যে উত্‍সব পালন করা হয় তাকে হোলিকা বা হোলি উত্‍সব বলে। হোলির পূর্ব রাতে যে ঝোপে আগুন লাগানো  হয় তা আসলে হোলিকারই চিতা। কোথাও কোথাও বুড়ির ঘর পোড়ানোও বলে। হোলিকা দহনের পর একমুঠো ছাই তুলে নিয়ে ঘরে রাখার রেওয়াজও প্রচলিত ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। বিশ্বাস, এই ছাই ঘরে থাকলে রোগমুক্তি ঘটবে।


1 comment:

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...