রেলের কামরায় এবার আপনিই ‘মহারাজা’
স্বাদ থাকলেও এতদিন সাধ্যে কুলোত না। এবার স্বাদ ও সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটাতে উদ্যোগী ভারতীয় রেল। এবার আপনিও চড়তে পারেন ‘প্যালেস অন হুইলস’, ‘মহারাজা’স এক্সপ্রেস’, ‘দ্য গোল্ডেন চ্যারিয়ট’, ‘দ্য ডেকান ওডিসি’, ‘রয়্যাল ওরিয়েন্ট’, ‘রয়্যাল রাজস্থান অন হুইলস’-এর মতো বিলাসবহুল ট্রেনে। কারণ এই ট্রেনগুলির ভাড়া সাধারণের সাধ্যের মধ্যে আনতে চলেছে ভারতীয় রেল। ট্রেনগুলিতে ৫০ শতাংশ ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলমন্ত্রক।
প্যালেস অন হুইলস-
১৯৮২ সালের ২৬ জানুয়ারি যাতত্রা শুরে করে ‘প্যালেস অন হুইলস’। ভারতীয় রেলের সঙ্গে রাজস্থান ট্যুরিজন ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে। লক্ষ্য, রাজস্থানের পর্যটন শিল্পকে তুলে ধরা। ২০০৯ সালে ঢেলে সাজানো হয় ‘প্যালেস অন হুইলস’-কে। ২০১০ সালে পৃথিবীর মধ্যে বিলাসবহুল ট্রেনগুলির মধ্যে চতুর্থ জায়গা পায় ‘প্যালেস অন হুইলস’। ট্রেনের কামরা সংখ্যা ২৩। একসঙ্গে সফর করতে পারেন মাত্র ১০৪ জন। প্রতিটি কামরার নামকরণ পূর্বতন রাজপুত রাজ্যগুলির নামে। যেমন, আলওয়ার, ভরতপুর, বিকানের, বুঁদি, ঢোলপুর, ডোঙ্গরগড়, জয়সলমীর, জয়পুর, ঝালওয়ার, জোধপুর, কিষাণগড়, কোটা, শিরোহী এবং উদয়পুর। কামরার অন্দরসজ্জাও সেই রাজকীয় অতীতের সঙ্গে সম্পূর্ণ মানানসই। প্রতিটি কোচে ৪টি কেবিন। প্রতিটি কেবিনে বিলাসিতার অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। ট্রেনে রেস্তোরাঁর সংখ্যা ২, একটির নাম ‘মহারাজা’, অন্যটি ‘মহারানি’। রাজস্থানি খাবারের পাশাপাশি, পাওয়া যায় চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল। আছে বার, স্পা। সুপার ডিলাক্স স্যুইটেই প্রতি সফরে মাথা পিছু খরচ ভারতীয় টাকায় প্রায় ৮ লক্ষ ২০ হাজার। দু’জনে একটি কামরা ভাগাভাগি করলেও সেই খরচ তিন লক্ষ টাকার কাছাকাছি। সাধারণ কামরায় থাকলে মাথা পিছু খরচ প্রায় ৪ লক্ষ টাকা।
মহারাজা’স এক্সপ্রেস-
এখন ‘প্যালেস অন হুইলস’-এর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ‘মহারাজা’স এক্সপ্রেস’। শুধু ভারতই নয়, এশিয়ার বিলাসবহুল ও ব্যয়বহুল ট্রেনগুলির মধ্যে অন্যতম। ৮ দিনের প্যাকেজ ট্যুরে এই ট্রেনে ঘুরে দেখা যায় তাজমহল, খাজুরাহো, রণথম্ভোর, ফতেপুর সিকরি ও বারাণসী। ন্যূনতম ভাড়া ৮০০ মার্কিন ডলার। খাওয়া-দাওয়া বিলাসের যাবতীয় খরচ এর মধ্যেই। পাঁচতারা হোটেলের মতো ২৪টি কামরায় সফর করতে পারেন মাত্র ৮৮ জন। তবে কম করে ২৫ জন যাত্রী না হলে বাতিল হয় যাত্রা। টিকিট বুক করা যায় অনলাইনে।
দ্য গোল্ডেন চ্যারিয়ট-
‘প্যালেস অন হুইলস’-র সাফল্য দেখে এরকম একটি ট্রেন চালু করতে উদ্যোগী হয় কর্ণাটক সরকার। ২০০২ সালে চুক্তি হয় ভারতীয় রেল এবং Karnataka State Tourism and Development Corporation বা
KSTDC-র সঙ্গে। ইন্টিগ্র্যাল কোচ ফ্যাক্টরিকে বরাত দেওয়া হয় ট্রেন তৈরির। ৯০০টি ডিজাইন তৈরি করেন আর্কিটেক্টরা। তার মধ্যে থেকে নির্বাচিত হয় একটি নকশা। আর্কিটেক্ট কুসুম পেন্ডসে ২০০ জন কারিগরের সঙ্গে ৪ মাস ধরে বাস্তব রূপ দেন কোচের। শেষমেশ, ২০০৮ সালের ২৩ জানুয়ারি, কর্ণাটকের সুবর্ণজয়ন্তী বছরে উদ্বোধন হয় স্বপ্নের সেই ট্রেনের। ‘দ্য গোল্ডেন চ্যারিয়ট’। হাম্পির স্টোন চ্যারিয়টের নাম অনুসারে এই নাম। যশবন্তপুর রেল স্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পতাকা নেড়ে যাত্রা শুরুর সঙ্কেত দেন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল। ১০ মার্চ প্রথম ব্যাঙ্গালোর(এখন বেঙ্গালুরু) থেকে গোয়া যায় ট্রেনটি। কেরল, তামিলনাড়ুকেও ছুঁয়ে যায় এই বিলাসবহুল ট্রেন। আছে ১৯টি কোচ, রং বেগুনি-সোনালি। রয়েছে ৪৪টি কেবিন। কেবিনে পুরাণের ঘটনা অবলম্বনে শৈল্পিক নকশা। প্রতিটি কেবিনের নাম রাখা হয়েছে বিভিন্ন রাজার নামে, যাঁরা বিভিন্ন সময় ভারতে রাজত্ব করেছেন। এশিয়ার অন্যতম সেরা বিলাসবহুল ট্রেন হিসেবে ২০১৩ সালে ‘ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ড’ পায় ‘দ্য গোল্ডেন চ্যারিয়ট’। প্রতি সোমবার বেঙ্গালুরু থেকে যাত্রা শুরু করে গোয়ায় গিয়ে শেষ হয় যাত্রা। ৭ দিন ৮ রাতের জন্য এই ট্রেনের যাত্রা উপভোগ করতে এতদিন গুণতে হত সর্বনিম্ন সাড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার মার্কিন ডলার।
এত দিন মূলত বিদেশি পর্যটকরাই এই ধরনের বিলাসবহুল ট্রেনগুলিতে সফর করতে পারতেন। সাধারণ ভারতীয় যাত্রীদের ধরা-ছোঁয়ার একেবারে বাইরে ছিল এইসব বিলাসবহুল ট্রেন। তাই কয়েকটি ‘পাঁচ তারা’ ট্রেনের ভাড়া এক ধাক্কায় পঞ্চাশ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় রেল। রেল মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, যে সব রাজ্য দিয়ে এই ট্রেনগুলি যায়, সে রাজ্যের পর্যটন বিভাগ এবং IRCTC এত দিন পণ্য পরিবহণের খরচ বহন করত। কিন্তু সেই খরচই এ বার অর্ধেক করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় রেল। যার ফলে এই সব ট্রেনের ভাড়া এক ধাক্কায় অনেকটাই কমতে চলেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে এই সব ট্রেনে বিদেশি যাত্রীদের সংখ্যা কমে গিয়েছে। রেলের রিপোর্ট বলছে, ‘প্যালেস অন হুইলস’ আর ‘রয়্যাল রাজস্থান’-এর মতো দু’টি ট্রেনের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ২৫ থেকে ৬৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। এই দু’টি ট্রেন চালায় রেল ও রাজস্থান সরকারের পর্যটন বিভাগ। সম্প্রতি কর্ণাটক সরকার ‘গোল্ডেন চ্যারিয়ট’-এর রাজস্ব ভাগ করার প্রস্তাব দেয় রেলকে। তার পরই বিলাসবহুল ট্রেনগুলি নিয়ে বৈঠকে বসে ভারতীয় রেল বোর্ড। সেই বৈঠকেই ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত।
- Subscribe: https://www.youtube.com/c/RAJATKANTIBERA
- Blog: http://rajatkb.blogspot.com
- Google Plus: https://plus.google.com/u/0/
- Linkedin: https://www.linkedin.com/in/rajatkanti-bera-275134139/
- Facebook: https://www.facebook.com/rajatkanti.bera
No comments:
Post a Comment