‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’
ছোট রবিকে মনে পড়ে
রবিপক্ষে কবি প্রণাম৷ জোড়াসাঁকো থেকে শান্তিনিকেতন৷ রাজ্যজুড়ে কথায়-গানে-কবিতায় পালিত ২৫ বৈশাখ৷ পঁচিশের সকালে রবি-স্মরণে রাস্তায় রাস্তায় শোভাযাত্রায় পা মেলাল অসংখ্য কচিকাঁচা। তাদের দেখেই ইচ্ছে হল ছোট্ট রবির কথা লেখার।
জল পড়ে, পাতা নড়ে...
তাঁর পড়া প্রথম কবিতা। সাধারণ এক ঘটনার কী অসাধারণ পর্যবেক্ষণ! বৃষ্টির জল পড়ে গাছের পাতা নড়ার মতো ঘটনা তো ছোটবেলায় আমরা সবাই দেখেছি। কিন্তু এই পর্যবেক্ষণ ছোট্ট শিশুর মনের পাতাকেও ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকোর ৬ নম্বর দ্বারকানাথ লেনের বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে। বাংলা ক্যালেণ্ডারে তারিখ ছিল ২৫ বৈশাখ, ১২৬৮। ইংরেজি ৭ মে, ১৮৬১। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। ভোর আড়াইটে থেকে তিনটের মধ্যে জন্ম। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মায়ের নাম সারদা দেবী।
জীবনের প্রথম দশটি বছর বাবার সঙ্গে ছোট্ট রবির পরিচিত হওয়ার খুব একটা সুযোগ হয়নি।বাইরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন বাবা। বাড়ির অন্তঃপুরে ডুবে থাকতেন মা। অন্তঃপুর ও বাড়ির বাইরের জগৎ নিষিদ্ধ ছিল শিশু-বালকদের জন্য। ফলে, বাড়ির ভৃত্যদের কড়া অনুশাসনের মধ্যেই ঠাকুরবাড়ির দোতলায় দক্ষিণ-পূর্ব কোণের ঘরে অন্য কচিকাঁচাদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে রবি-শৈশব। সেই সুযোগে শিশুদের নানারকম নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর শাসনে আটকে রাখত ভৃত্যরা।
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষারম্ভ হয় দাদা হেমেন্দ্রনাথের হাতে। পারিবারিক পরিবেশেই ঈশরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের
‘বর্ণপরিচয়’ বইটি দিয়ে রবীন্দ্রনাথের পড়াশোনা শুরু হয়। ‘রবিজীবনী’-র লেখক প্রশান্তকুমার পাল
লিখেছেন- ‘ঈশরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ বইয়ের প্রথম ভাগ রবীন্দ্রনাথের প্রথম পড়ার বই
হিসেবে ধরে নেয়া যায়, তবে ঠাকুরবাড়ির হিসাবের খাতায় রবীন্দ্রনাথের জন্য বইটি কেনার কথা কোথাও উল্লেখ নেই।’ অন্যদিকে, ‘রবীন্দ্রকথা’ বইয়ের লেখক খগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা আরম্ভ হয় গৃহশিক্ষক মাধবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের হাতে। তিনি ছিলেন তৎকালীন বর্ধমান জেলার বাসিন্দা। জোড়াসাঁকো বাড়ির ঠাকুরদালানে বসত মাধব গোঁসাই-এর পাঠশালা। সেই পাঠশালায় বাড়ির শিশুদের সাথে পাড়া-প্রতিবেশীর ছেলেরাও পড়াশোনা করতে আসত।’ পরবর্তী কালে এই ঠাকুরদালানের পাঠশালার গুরু মশাই ‘মাধব গোঁসাই’-এর দেখা মেলে রবীন্দ্রনাথ এর ‘ছেলেবেলা’ ও ‘শিশু’ কাব্যগ্রন্থের ‘পুরোনো বট’ কবিতায়।
ওখানেতে পাঠশালা নেই, পণ্ডিতমশাই-বেত হাতে নাইকো বসে মাধব গোসাঁই।
সারাটা দিন ছুটি কেবল, সারাটা দিন খেলা,
পুকুর-ধারে আঁধার-করা বটগাছের তলা।
- পুরোনো বট
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। ছবি সৌজন্যে - গুগল ইমেজ |
দোতলার ঘরের বারান্দার জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা সেই বটগাছ, ঘাট বাঁধানো পুকুরে নানাজনের
স্নানের দৃশ্য, রাজহাঁস-পাতিহাঁসের ডুব দেওয়া, গুগলি তুলে খাওয়া, পালকের মধ্যে ঠোঁট দিয়ে
পালক সাফ করার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতেন রবীন্দ্রনাথ। ছোট্ট মন ছটফট করত বাইরে বেরনোর।
‘পুরোনো বট’ কবিতায় লিখেছেন-
গল্প কত ছিল যেন, তোমার খোপে-খাপে,
পাখির সঙ্গে মিলে-মিশে ছিল চুপে-চাপে,
দুপুর বেলা নূপুর তাদের বাজত অনুক্ষণ,
ছোটো দুটি ভাই-ভগিনীর আকুল হত মন।
কিন্তু সেই আকুল মন জানত, বাইরে বেরনোর উপায় নেই। তাই এসব দৃশ্য উপভোগের ভিতর
দিয়েই রবি আপন দু:খবোধকে জয় করে খুঁজে নিয়েছিলেন নতুন আনন্দ। ধরেছিলেন কলম।
রবীন্দ্রনাথ প্রথম কবিতা লিখেছিলেন সাত-আট বছর বয়সে| তারপর আর থামেননি তিনি। লেখনি
দিয়েই তিনি আলোকিত করেছেন বাংলার মুখ, দেশের মুখ। বাংলা ভাষাকে অধিষ্ঠিত করেছেন
বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদাপূর্ণ আসনে।
আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতূহলভরে-
আজি হতে শতবর্ষ পরে।
- ১৪০০ সাল
শতবর্ষ পার৷ জন্মের দেড়শো বছর পরও বাঙালির মননে, সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে সমান প্রসঙ্গিক
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তাই দিন আসে দিন যায়৷ ২৫ বৈশাখ তাঁর কৌলিন্য হারায় না৷ শ্রদ্ধায়-স্মরণে
চিরভাস্বর কবিগুরুর জন্মদিন৷
কবিগুরুর ১৫৮ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বরাবরের মতো এদিন ভোর থেকে অনুষ্ঠানের আবহ
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে৷ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অসংখ্য সাধারণ মানুষের ভিড়৷ চিরাচরিত প্রথা
মেনে এদিন ভোরে প্রথমে কবিগুরুর জন্মকক্ষ ও প্রয়াণকক্ষে মাল্যদান করা হয়৷ তারপরই
কবিতায়-গানে রবীন্দ্রমুখর হয়ে ওঠে ঠাকুরবাড়ি প্রাঙ্গন৷
শান্তিনিকেতনেও চিরাচরিত প্রথা মেনে পালিত হয় রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী৷ গুরুদেবের ১৫৮ তম জন্মদিন
উপলক্ষে ভোর পাঁচটায় রবীন্দ্র ভবনে রবি ঠাকুরের গাওয়া গানের রেকর্ড বাজানো হয়৷ এরপর
সকাল সাড়ে ৬টায় শান্তিনিকেতন উপাসনাগৃহে বৈদিক স্তোত্র পাঠ ও রবীন্দ্র সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে
গুরুদেবকে স্মরণ করা হয়৷ সকাল ৮টায় উত্তরায়ণের শ্যামলী গৃহপ্রাঙ্গনে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ দিয়ে
শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান৷
- Subscribe: https://www.youtube.com/c/RAJATKANTIBERA
- Blog: https://rajatkb.blogspot.com
- Google Plus: https://plus.google.com/u/0/
- Linkedin: https://www.linkedin.com/in/rajatkanti-bera-275134139/
- Facebook: https://www.facebook.com/rajatkanti.bera
© All rights of this article and this BLOG reserved for RAJATkanti BERA. Unauthorized use or reproduction of any cause is strictly prohibited.
No comments:
Post a Comment