জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা: চন্দন, দুধ ও সুগন্ধী
মেশানো জলে স্নান সারলেন দেব-দেবীরা
গজবেশ। জগন্নাথ দেব এবং বলরাম দেবকে হাতি বেশে সাজানো হয়... |
আজ জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা। রীতি মেনে চন্দন, দুধ ও সুগন্ধী মেশানো ১০৮ ঘড়া জলে মায়াপুরে স্নান করলেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। স্নানযাত্রা পালিত হল মুদিয়ালি থেকে মাহেশে।
জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা।
স্নান সেরে নতুন বেশ ধারণ করলেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। পুরী, কলকাতা থেকে জেলা- রাজ্যজুড়ে উত্সবের পরিবেশ।
শ্রীক্ষেত্র পুরী হল মর্ত্যের বৈকুন্ঠ, দ্বারকা। পুরী মন্দিরের চারটি দরজা। অশ্ব, হস্তি, ব্যাঘ্র ও সিংহ। অশ্ব=অর্থ, হস্তি=মোক্ষ, ব্যাঘ্র=কাম, সিংহ=ধর্ম। জগন্নাথ সিংহ দরজা দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন। মহাপ্রভুও এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেন জগন্নাথ দর্শনে। হস্তি দরজা দিয়ে জগন্নাথ বের হয় সমাধিতে যাওয়ার জন্য। নাহলে দরজা বন্ধ থাকে সব সময়।
জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ দেবের এক বিশেষ স্নান যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। স্কন্ধপুরাণ অনুসারে, রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য যখন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করলেন তখন থেকে এই স্নান যাত্রার উৎসব শুরু। স্নান যাত্রার আগের দিন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং সুদর্শনকে বেদী থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা স্নান বেদীতে নিয়ে আসা হয়। পুরীর মন্দির প্রাঙ্গনে বিশেষ ভাবে তৈরি করা এই মণ্ডপকে বলা হয় স্নান মণ্ডপ। ফুল দিয়ে সাজানো হয় জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ।
পুরীতে স্নানের জন্য সোনার তৈরি এক বিশেষ কুয়া থেকে জল আনা হয়। জল আনার সময় পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন যাতে জল তাদের মুখ থেকে কোনও কিছু না পড়ে বা নিঃশ্বাস না পড়ে। স্নান মহোৎসবের আগে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে সিল্কের কাপড় দিয়ে জডিয়ে এক ধরনের লাল পাউডার দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। ১০৮ টি জল ভর্তি সোনার পাত্র সাজানো থাকে। এই জল দিয়েই অভিষেক করা হয়। তারপর জগন্নাথ দেব এবং বলরাম দেবকে হাতি বেশে সাজানো হয়। একে বলা হয়, গজবেশ। সুভদ্রাকে সাজানো হয় পদ্ম সাজে। স্নান যাত্রার পর ১৫ দিন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে রতন বেদী নামে এক বিশেষ বেদীতে রাখা হয়। এই সময়কে বলা হয় অনাবাসর কাল মানে পূজা করার জন্য অযোগ্য সময়। এই সময় মন্দিরে ঢুকতে পারেন না ভক্তরা।
জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে কলকাতার মুদিয়ালি জগন্নাথ মন্দিরে সকাল থেকে সাড়ম্বর উত্সব। স্নানের পর জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রাকে পরানো হয় বিশেষ সাজ গজবেশ।
নদিয়ার মায়াপুরেও সকাল থেকে পুণ্যার্থীদের ঢল।
মায়াপুরের রাজাপুর জগন্নাথ মন্দিরে রীতি মেনে চন্দন, দুধ ও সুগন্ধী মেশানো ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে।
অন্যদিকে, জগন্নাথের স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে জমজমাট হুগলির মাহেশও। এবার ৬২২ বছরে পড়ল মাহেশের স্নানযাত্রা।
পুরীতে যেমন ১২ বছর অন্তর নব কলেবর হয়, মাহেশে বিগ্রহের কোনও পরিবর্তন করা হয় না। এদিন সকালে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে মন্দির সংলগ্ন মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে ৬০ কেজি দুধ ও ২২ ঘড়া গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয় তিন বিগ্রহকে।
স্নান দেখতে ভিড় করেন কয়েকহাজার মানুষ। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, জগন্নাথদেবের জ্বর হওয়ায় কয়েক দিন বন্ধ থাকবে মন্দির। রথযাত্রার ২ দিন আগে ফের মন্দির খোলা হবে।
- Subscribe: https://www.youtube.com/c/RAJATKANTIBERA
- Blog: http://rajatkb.blogspot.com
- Google Plus: https://plus.google.com/u/0/
- Linkedin: https://www.linkedin.com/in/rajatkanti-bera-275134139/
- Facebook: https://www.facebook.com/rajatkanti.bera
No comments:
Post a Comment