Sunday, July 15, 2018

Rathayatra in West Bengal: Rathayatra of Mahesh is second oldest in the world, turns 625 years

বাংলার রথযাত্রা: বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীন মাহেশের রথ-উত্‍সব এবার ৬২৫ বছরে


সে কাল থেকে এ কাল-- রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে মানুষের উৎসাহ এতটুকু কমেনি। শ্রীক্ষেত্র পুরীর রথযাত্রার মতোই বাংলার নিজস্ব রথযাত্রা বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল, হুগলির শ্রীরামপুর শহরের মাহেশে, গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবনচন্দ্র মঠের রথ এবং কলকাতার ইস্কনের রথ ও বাংলাদেশের ধামরাই জগন্নাথ রথ বিখ্যাত।


মাহেশের রথ-
ঠিক কবে কোথায় প্রথম রথটি টানা হয়েছিল তা বলা কঠিন। তবে অনুমান করা যায়, হুগলি জেলার মাহেশ-এর জগন্নাথ মন্দিরের রথই বাংলার প্রাচীনতম রথ। ইতিহাস বলছে, পুরীতে যাওয়ার পথে মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে এসেছিলেন চৈতন্যদেব। পুরীকে বলা হয় নীলাচল। চৈতন্যদেব মাহেশকে ‘নব নীলাচল’ আখ্যা দেন। প্রাচীনতায়, ঐতিহ্যে পুরীর পরেই মাহেশের স্থান। এই রথযাত্রায় এসেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ স্বয়ং।তবে পুরীর মতো তিনটি নয়, একটি মাত্র রথেই জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম বিগ্রহ তুলে রথযাত্রা হয় এখানে। প্রায় ৬২৫ বছরের পুরনো হুগলির শ্রীরামপুরের মাহেশের রথ। ১৭৫৫-এ কলকাতার নয়নচাঁদ মল্লিক নামে এক ব্যক্তি মাহেশে জগন্নাথ দেবের মন্দিরটি তৈরি করেন। বর্তমান রথটি প্রায় ১৩৭ বছরের পুরনো। সে যুগে ২০ হাজার টাকা খরচ করে শ্যামবাজারের বসু পরিবারের সদস্য হুগলির দেওয়ান কৃষ্ণচন্দ্র বসু রথটি তৈরি করিয়ে দেন। রথের উচ্চতা ৫০ ফুট৷ রথটিতে রয়েছে মোট ১২টি লোহার চাকা এবং দু’টি তামার ঘোড়া। কথিত আছে, ৬২৫ বছর আগে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে জগন্নাথদেবের এক ভক্ত পুরীতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে জগন্নাথের দর্শন না পেয়ে দুঃখে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছিলেন। পরে ভগবানের স্বপ্নাদেশ পেয়ে মাহেশে এসে গঙ্গার ধারে বসেছিলেন। প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝার এক রাতে গঙ্গায় ভাসমান একটি নিমকাঠ পান ধ্রুবানন্দ। ওই নিমকাঠ দিয়েই জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেই বিগ্রহই আজও পুজিত হচ্ছে। সেই সময় গঙ্গার ধারে (বর্তমানে লক্ষ্মীঘাট) তৈরি হয় মন্দির। স্নানযাত্রার দিন দুধ-গঙ্গাজলে স্নান করে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার জ্বর হয়। আরামবাগ, গোঘাট এবং ঘাটাল থেকে তিন জন কবিরাজ আসেন। তাঁদের দেওয়া পাঁচনে ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন তাঁরা। রথযাত্রার এক দিন আগে রাজা হিসেবে অভিষেক হয় জগন্নাথের। প্রতি বছর রথের আগে বিগ্রহের অঙ্গরাগ হয়। মাহেশের রথের অন্যমত বৈশিষ্ট্য, রথের দিন সাধারণ মানুষ ছুঁতে পারেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রাকে৷ পুজো শেষে দুপুরের পর রথে স্থাপন করা হয় বিগ্রহগুলি৷ তার পর বিকেলে রথের রশিতে টান পড়ে৷ গ্র্যান্ড ট্র্যাঙ্ক রোডের উপর দিয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় মাহেশের রথ৷ রথের সঙ্গে বাঁধা কুশের তৈরি লম্বা রশিতে টান দেন কয়েক হাজার ভক্ত৷ তাঁরাই টেনে নিয়ে গেলেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রাকে৷ মাহেশে গুণ্ডিচাবাটিকে বলা হয় কুঞ্জবাটী বা মাসির বাড়ি। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রাধারানি’ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ছিল এই মাহেশের রথযাত্রা। 

নৈহাটির বিজয় রাধাবল্লভ জিউর রথ-
১৮৬২-র রথযাত্রার দিনই শুরু হয় শিয়ালদা থেকে রানাঘাট ট্রেন চলাচল। সেই সময় এই রথযাত্রা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে রথের সময় বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করত। আট দিন ধরে বসত রথের মেলা। সেই প্রথা আজও অব্যাহত। রথটি উৎসর্গ করা হয় বঙ্কিমচন্দ্রের মা দুর্গাসুন্দরী দেবীর নামে। তাই তিনি সবার আগে রথের রশিতে টান দিতেন। আজও প্রথা অনুসারে জগন্নাথ নন, রথে ওঠেন রাধাবল্লভ ও বলরাম। এই রথযাত্রাকে নিয়ে নানা জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। ১৮৭৫-এ রথ উপলক্ষে ছুটি নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র নৈহাটির বাড়িতে এসেছিলেন। ঠিক সেই বছরই রথের মেলায় প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে একটি মেয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। ঘটনাটি শুনে বঙ্কিম নিজেও মেলার মধ্যে মেয়েটির অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছিলেন। এই ঘটনাটির কয়েক মাস পরেই বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন ‘রাধারানি’ উপন্যাসটি।

মহিষাদলের রথ-
১৭৭৬ সালে রানি জানকীদেবী এই রথযাত্রার সূচনা করেন৷ পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের রথের উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট৷ এখানকার রথের বৈশিষ্ট হল, জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বদলে, অসীন রাজবাড়ির কূলদেবতা৷ প্রথা মেনে রশিতে টান দিয়ে রথযাত্রার সূচনা করেন, রাজপরিবারের কোনও সদস্য৷ এখানে প্রায় ১৫ দিন ধরে রথের মেলা চলে৷ পশ্চিমবাংলার রথযাত্রার ইতিহাসে মহিষাদলের মদনগোপাল জীউর ১৭ চূড়ার রথটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য| ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে মতিলাল উপাধ্যায় মহিষাদলের সিংহাসনে বসেন| তাঁরই সময় সতেরো চূড়ার রথটি নির্মিত হয়। পুরীর জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার অনুকরণে প্ৰতিবছর রথ টানা হয় শুক্লা দ্বিতীয়ায়| রথটি সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে তৈরি। রথের গায়ে খোদিত বিভিন্ন কারুকার্য ও শিল্পকলা। রাজা জগন্নাথ গর্গের সময় আগুনে পুড়ে যায় রথটি। পরে সেটির সংস্কার করা হয়| রাজা লছমন প্রসাদের আমলে আরও একবার রথটি পুড়ে যায়| ফের নতুন করে তৈরি হয় রথ। তখন ১৭ চূড়ার পরিবর্তে তা করা হয় ১৩ চূড়ার। রাজা লছমন প্রসাদই ১৮৫১ সালে ১৩ চূড়ার রথটির প্রতিষ্ঠা করেন। এখনও টানা হয় সেই ১৩ চূড়ার রথ।

No comments:

Post a Comment

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...