Sunday, July 15, 2018

RathaYatra: Lord Jagannath's Annual Visit To Gundichabari(Aunt's House), Jagannath Festival in Puri

রথের রশিতে পড়ল টান, পৌর্ণমাসির বাড়ি চললেন জগন্নাথ



রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব—হাসে অন্তর্যামী।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রথ ও পথের এই দ্বন্দ্ব চিরন্তন। অন্তর্যামী আড়াল থেকে হাসেন ঠিকই, কিন্তু দ্বন্দ্ব-দীর্ণ-জীর্ণ-জ্বরা না থাকলে জীবনের মাধুর্য কোথায়? উৎসবের আনন্দই বা কোথায়!

দুর্গাপুজো, কালীপুজো বা গণেশ পুজোর মতো বিস্তৃত না হলেও বাংলার অন্যতম বড় উত্‍‌সব রথযাত্রা। রথযাত্রা বা রথদ্বিতীয়া আষাঢ় মাসে আয়োজিত অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব। পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয় এই উৎসব। এই উৎসব প্রাথমিক ভাবে ওড়িশার হলেও শ্রীচৈতন্যর হাত ধরে রথযাত্রা এই বাংলাতেও যথেষ্ঠ জনপ্রিয় উত্‍‌সব। মনে করা হয়, শ্রীচৈতন্যর নির্দেশে ভক্ত বৈষ্ণবরা পুরীর অনুকরণে বাংলায় রথযাত্রার প্রচলন করেন।

দেশে সবচেয়ে বিখ্যাত রথযাত্রা ওড়িশার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা। প্রথা অনুযায়ী, রথের আগের দিন পুরীতে পালিত হয় ‘উভযাত্রা’৷ কার্যত রথযাত্রার প্রস্তুতির জন্যই নির্দিষ্ট থাকে ওই দিনটি৷ রথের দিন ভোরে জগন্নাথ দেবের মন্দিরে মঙ্গলারতি ও পুজো অর্চনার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় রথযাত্রা উত্সবের৷ রথযাত্রার দিন সকাল সকাল স্নান করেন জগন্নাথ দেব।  প্রাচীন এই রীতিকে বলে অবসর। স্নানের পর খিচুড়ি ভোগ খান জগন্নাথদেব। তারপর তৈরি হন মাসির বাড়ি যাওয়ার জন্য।

ভোগ বিতরণের পর রথের প্রতিষ্ঠা। ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা বাজিয়ে মন্দির থেকে শোভাযাত্রা করে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রাকে বের করে আনা হয় বাইরে। মন্দিরের সিঁড়ি থেকে রথ পর্যন্ত রাস্তায় বিছিয়ে দেওয়া হয় তোষক। তার ওপর দিয়ে এনে দেবতাদের তোলা হয় তিনটি আলাদা রথে। এই রীতিকেই বলে, পোহণ্ডিবিজয়।

পোহণ্ডিবিজয়ের পর সোনার ঝাঁটা দিয়ে রথের পথ পরিষ্কার করেন পুরীর রাজা৷ এই রীতিকে বলা হয় ছেড়াপহরা৷ তারপর আরতি। আরতির পর শুরু রথযাত্রা।

১২ বছর অন্তর পুরীতে হয় নব কলেবর। প্রতি বথছ বিশেষ ধরনের কাঠ দিয়ে তৈরি হয় তিনটি রথ। জগন্নাথদেবের রথের নাম নন্দীঘোষ, বলভদ্রের রথ তালধ্বজ এবং সুভদ্রার রথ হল দর্পদলন৷ রথযাত্রার শুরুতেই থাকে বলরামের রথ। বলরামকে বলা হয় গুরুর প্রতীক। এরপর সুভদ্রার রথ। সুভদ্রা হলেন ভক্তির প্রতীক। সবশেষে জগন্নাথের রথ। তিনি হলেন ঈশ্বরের প্রতীক। বলা হয়, গুরুর হাত ধরে ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনো যায়। পুরীর রথ তৈরি হয়েছে ২০৬টি কাঠ দিয়ে। মানবদেহও ২০৬টি হাড় দিয়ে তৈরি। তাই পুরীর রথকে মানবদেহ হিসেবেই দেখা হয়। এর অর্থ, মানবদেহেই ঈশ্বরের অধিষ্ঠান। পাশাপাশি, আরেকটি মত বলে, বলরাম হলেন জীব জগতের প্রতীক। মাঝে সুভদ্রা শক্তির প্রতীক এবং শেষে জগন্নাথ ব্রহ্মের প্রতীক।

কথিত আছে, কৃষ্ণ যখন মথুরার যান তখন একবার বৃন্দানের গোপিনীরা মথুরায় যান কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু রাখাল রাজা কৃষ্ণকে দেখতে পাননি তাঁরা। কৃষ্ণের তখন ঐশ্বর্য রূপ।  মন খারাপ করে বৃন্দাবনে ফিরে আসেন গোপিনীরা । তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে মথুরা থেকে রথে করে বৃন্দাবনে আসেন শ্রীকৃষ্ণ। মানুষের বিশ্বাস, জগন্নাথ হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের রূপ। তাই রথের দিন কৃষ্ণ সেজে নাচগান করেন ভক্তরা।

প্রচলিত কথায় বলে, জগন্নাথ যান মাসির বাড়ি। কিন্তু পুরাণবিদরা বলেন, এই মাসির বাড়ি আসলে জগন্নাথের বান্ধবী ‘পৌর্ণমাসি’-র বাড়ি। সেখানে সাত দিন কাটিয়ে যখন জগন্নাথ মন্দিরে ফেরেন তখন অভিমানে তাঁকে আর মন্দিরে ঢুকতে দেন না স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী। বেগতিক বুঝে জগন্নাথ স্ত্রীর মানভঞ্জন করেন রসগোল্লা পাঠিয়ে। সেই রসগোল্লা নিয়েই তো বাংলা আর ওড়িশার দীর্ঘ আইনি লড়াই হয়ে গেল। ওড়িশার দাবি, রসগোল্লা তাদের তৈরি, বাংলার দাবি রসগোল্লা তাদের সৃষ্টি। শেষমেতার অবশ্য জিআই ট্যাগ পেয়েছে বাংলার নবীন ময়রার রসগোল্লাই। স্বামীর কাছ থেকে রসগোল্লা পেয়ে মান ভাঙে লক্ষ্মীর। মন্দিরে প্রবেশাধিকার মেলে জগন্নাথের। 


No comments:

Post a Comment

Popular Posts

বাংলার ঘরে ঘরে আজ শিবরাত্রি পুরাণ মতে, শিবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য রাত জেগে উপবাস করে শিবের আরাধনা করেছিলেন দেবী পার্বতী৷ তারপর থেকেই ...