দেবীজ্ঞানে আরাধনা। বহু বছরের প্রাচীন রীতি মেনে অষ্টমীর সকালে কুমারী পুজো৷ পরনে রঙিন শাড়ি৷ বাহারি ফুলের সাজ৷ হাতে পদ্ম৷ ঠিক যেন দেবী দুর্গা৷
ইতিহাস, ঐতিহ্যের কুমারী পুজো। মৃন্ময়ী উমার পাশাপাশি পূজিতা কুমারী দেবী।
দেবীকে মৃন্ময়ী রূপে আরাধনার পাশাপাশি কুমারীর মধ্যে মাতৃরূপ দর্শন, এই প্রথা মেনেই প্রতিবারের মতো এবারেও বেলুড় মঠে কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়৷
১৯০১ সালে মা সারদার উপস্থিতিতে ৯ জন কুমারীকে পুজো করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ৷ তিনি তাঁদের পায়ে পুষ্পাঞ্জলি দেন ও পুজো শেষে তাঁদের দেন দক্ষিণা। সেই থেকেই চলে আসছে এই প্রথা৷ বেলুড় মঠের পাশাপাশি কামারপুকুরে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মভিটের দুর্গাপুজোতেও রীতি মেনে কুমারী পুজো করা হয়৷ কুমারীকে এখানে ডাকা হয় ‘উমা’ নামে৷ অষ্টমীর সকালে কুমারীকে গঙ্গার পবিত্র জলে স্নান করিয়ে শুদ্ধ করে লাল বেনারসী শাড়ি পরিয়ে ফুল, গয়না ও পায়ে আলতা দিয়ে সাজানো হয়। পুজো শেষ হওয়া পর্যন্ত কুমারীকে উপবাস করতে হয়। এরপর দেবী দুর্গার মূর্তির সামনে বসিয়ে দেবীর হাতের একটি পদ্মফুল তার হাতে দিয়ে পুজো শুরু হয়।
কুমারী পূজা হল তন্ত্রশাস্ত্র মতে অনধিক ১৬ বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেয়ের পুজো। বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে খুব যত্ন সহকারে কুমারী নির্বাচনের কথা বলা আছে। ‘কুমারী’কে হতে হবে দেবীর মতোই পবিত্র ও প্রশান্ত। বিশেষত দুর্গাপুজোর অঙ্গরূপেই এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও কালী, জগদ্ধাত্রী এবং অন্নপূর্ণা পুজো উপলক্ষ্যে এবং কামাখ্যা শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পুজো প্রচলন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি, বাংলাদেশের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, হবিগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলা শহরে রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পুজোর প্রচলন রয়েছে। দুর্গা পুজোর মহাষ্টমী পুজোর শেষে কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। নবমী পুজোর দিনেও হতে পারে কুমারী পুজো। যোগিনীতন্ত্র, কুলরণবতন্ত্র, দেবীপুরাণ, স্তোত্র, কবচ, সহশ্রমণ, তন্ত্রসর, প্রান্তসিনী ও পুরোহিতদর্পণে কুমারী পুজোর উল্লেখ আছে। এই পুজোর বৈশিষ্ট্য হল কুমারীকে পুজো করার সময় দেখা হয় না তার ধর্ম, জাত৷ ১ থেকে ১৬ বছর বয়সী যে কোনও মেয়েই কুমারী হতে পারে৷ এমনকী, বারবনিতার সন্তানও কুমারী রূপে পূজিতা হতে পারে৷
এক বছর সন্ধ্যা
২ বছর সরস্বতী
৩ বছর ত্রিধামূর্তি
৪ বছর কালিকা
৫ বছর সুভগা
৬ বছর উমা
৭ বছর মালিনী
৮ বছর কুষ্ঠিকা
৯ বছর কালসন্দর্ভা
১০ বছর অপরাজিতা
১১ বছর রুদ্রাণী
১২ বছর ভৈরবী
১৩ বছর মহালপ্তী
১৪ বছর পীঠনায়িকা
১৫ বছর ক্ষেত্রজ্ঞা
১৬ বছর অন্নদা বা অম্বিকা
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, মা কালীর হাতে কলাসুর বধের প্রতীকই হল কুমারী পুজো৷ কথিত রয়েছে, কলাসুর স্বর্গ ও মর্ত্য অধিকার করে নিয়েছিল৷ দেবতারা মা কালীর কাছে উদ্ধারের জন্য দরবার করেন৷ তাদের আর্তি শুনে মা কালী আবার জন্ম নেন শিশুকন্যা রূপে এবং কলাসুর বধ করেন৷ মানুষের বিশ্বাস, কুমারী পুজো করলে সব বিপদ কেটে যায়৷ দার্শনিক মতে, কুমারী পুজো সমাজে মেয়েদের মূল্য প্রতিষ্ঠা করে৷ কুমারিত্বকে মনে করা হয় শক্তির বীজ, সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ের প্রতীক৷ নারীত্ব ও প্রকৃতির
প্রতীক কুমারিত্ব৷ মনে করা হয়, কুমারীর মধ্যেই নেমে আসেন মা৷
কুমারী পুজোর পর মহাষ্টমী ও মহানবমীর মিলন মুহূর্তে সন্ধিপুজো৷ অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট, এই মোট ৪৮ মিনিট ধরে চলে
সন্ধিপুজো৷ আজ বেলা ১২টা ৩ থেকে ১২টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সন্ধি পুজোয় দেবী দুর্গাকে চামুণ্ডা রূপে দেখানো হয়৷ মায়ের উদ্দেশে অর্পণ করা হয় ১০৮টি পদ্ম ও ১০৮টি দীপ৷ এই পুজো হয় তান্ত্রিক মতে। দেবীকে ষোলটি উপচার নিবেদন করা হয়, হয় পশুবলি। পশুর ‘স্মাংস-রুধি’ অর্থাৎ মাংস ও রক্ত এবং কারণ বারি বা মদ প্রদান করা হয় দেবীর উদ্দেশে।
সন্ধি মানে দুই তিথির সন্ধিক্ষণ।
একদিকে যখন অষ্টমীর আনন্দ, অন্যদিকে তাই বিষাদও। কারণ, দিনের হিসেবে অষ্টমী হলেও বুধবার ছুঁয়ে ফেলেছে নবমী তিথিকেও।
- Subscribe: https://www.youtube.com/RAJATkantiBERA?sub_confirmation=1
- Blog: http://rajatkb.blogspot.com
- Google Plus: https://plus.google.com/u/0/
- Linkedin: https://www.linkedin.com/in/rajatkanti-bera-275134139/
- Facebook: https://www.facebook.com/rajatkanti.bera
No comments:
Post a Comment