আজ ষষ্ঠী... দেবীর বোধনে সূচনা শারদোত্সবের
আজ ষষ্ঠী। - ছবিটি লেখকের তোলা |
উত্সবের সকাল গড়িয়ে বিকেল৷ রোদ্দুরের আলো ছুঁয়ে নিয়ন-ধোওয়া রাস্তা৷ আজ ষষ্ঠী। আজ বোধন।
ট্রাফিকের সিগন্যাল যতই লাল চোখ দেখাক, পায়ে পায়ে সিগন্যাল গ্রিন। ভিড়ের চাপে যতই চিড়ে চ্যাপ্টা অবস্থা হোক কিম্বা ঘেমেনেয়ে একশা হোক গিলে করা পাঞ্জাবি, থেমে নেই প্যাণ্ডেল হপিং। আপত্তি নেই লম্বা লাইনের দীর্ঘ প্রতীক্ষায়। বছরে তো এই ক’টা মাত্র দিন। সারা বছর ধরে চাওয়া৷ পরম পাওয়া ক’টা দিন৷ শিউলি-গন্ধে সকাল শুরু, ঢাকের তালে রাত্রি ভোর। উত্সবের আলোর কাছে অসহায় অন্ধকার। মা তুমি এলেই ঘরে ঘরে উত্সব৷
আজ ষষ্ঠী। দেবীর বোধন। বোধনের পর অধিবাস৷ ষষ্ঠীর সকাল থেকেই দেবীর আবাহনের প্রস্তুতি৷ বিল্ববৃক্ষের তলায় দেবীর আরাধনা৷ গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী--সপরিবারে একরাত সেখানেই থাকবেন মা দুর্গা৷ সপ্তমীর সকালে পা দেবেন বাপের বাড়িতে৷ রীতিমতো শুচিশুদ্ধ হয়ে৷
অসুরদলনি, আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা, সিংহবাহনা সহ ১০৮ নামে অভিহিত। দুর্গ বা দুর্গম নামক দৈত্যকে বধ করেন বলে তাঁর নাম হয় দুর্গা। জীবের দুর্গতি নাশ করেন বলেও তাঁকে বলা হয় দর্গতিনাশিনী বা দুর্গা। ব্রহ্মার বরে পুরুষের অবধ্য মহিষাসুর নামে এক দানব স্বর্গরাজ্য দখল করলে রাজ্যহারা দেবতারা বিষ্ণুর শরণাপন্ন হন। বিষ্ণুর নির্দেশে সব দেবতার তেজ থেকে যে দেবীর জন্ম হয় তিনিই দুর্গা। দেবতাদের শক্তিতে শক্তিময়ী এবং বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিতা হয়ে দেবী মহিষাসুরকে বধ করেন। তাই দেবীর এক নাম হয় মহিষাসুরমর্দিনী বা মহিষমর্দিনী।
পাল্টে গিয়েছে সব কিছু৷ চেনা রাস্তা ... চেন জায়গা.... সব কিছু অন্যরকম। পুজোর ক’টা দিন সবকিছু পাল্টে যায়৷ আলো, রঙ, রূপ, বর্ণ, গন্ধ। পাল্টা যায় জীবনের চেনা ছন্দটা৷ মা এসেছেন যে৷ ঘরে ঘরে তাই আনন্দ৷
কিন্তু কলকাতা আছে কলকাতাতেই। সেটা টের পাওয়া গেল ষষ্ঠীর সন্ধ্যায়৷ দুপুর থেকেই রাস্তায় মানুষের ঢল। সন্ধে গড়াতেই জনস্রোত। আলো ঝলমলে রাস্তায় ঠাকুর দেখতে আট থেকে আশির ঢল। থিম, সাবেকিয়ানা মিলেমিশে একাকার উৎসবের রঙ। বাঙালির সেরা উত্সব। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে সেই আমেজই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন শহরবাসী। সঙ্গে হুল্লোড়, আড্ডাস পেটপুজো। ফুচকা, রোল, চাউমিন। কে বলবে আজ সবে বোধন।
দুর্গাপূজার প্রচলন সম্পর্কে পুরাণে আছে, পুরাকালে রাজ্যহারা রাজা সুরথ এবং স্বজনপ্রতারিত সমাধি বৈশ্য একদিন মেধস মুনির আশ্রমে যান। সেখানে মুনির পরামর্শে তাঁরা দেবী দুর্গার পূজা করেন। পূজায় তুষ্ট দেবীর বরে তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। এ পূজা বসন্তকালে হয়েছিল বলে এর এক নাম ‘বাসন্তী’ পুজো।
কবে আসবে তুমি?
গোটা বছরটাই তো কাটে এই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে৷ হাজার কষ্ট ভুলিয়ে দেয় ক’টা দিনের প্রতীক্ষা৷ এই ক’টা দিন যে তুমি সবসময় থাকো পাশে৷ তাইতো যেন সহজ হয়ে যায় ট্রামে-বাসে বাদুড়ঝোলা। অফিসের ফাইল। বসের চোখ রাঙানি৷ বাজারে মূল্যবৃদ্ধির গুঁতো৷ সহ্য হয়ে যায় রাজনৈতিক কচকচানি৷
ভাপা ইস্ত্রি থেকে ভাপা ইলিশ, ডালের ফোড়ন৷ যে রাঁধে সে তো চুলও বাঁধে৷ গোটা সংসার যে তারই কাঁধে৷ এই ক’টা দিন কিন্তু একেবারে অন্যরকম।
মা এসেছে যে৷ বদলে গেছে সবকিছু৷
আজ ষষ্ঠী... ।
© All rights of this article and this BLOG reserved for RAJATkanti BERA. Unauthorized use or reproduction of any cause is strictly prohibited.
- Subscribe: https://www.youtube.com/RAJATkanti BERA
- Blog: http://rajatkb.blogspot.com
- Instagram: https://www.instagram.com/berarajatkanti
- Twitter: https://twitter.com/berarajatkanti
- Facebook: https://www.facebook.com/rajatkanti.bera
- Linkedin: https://www.linkedin.com/in/rajatkanti-bera-275134139/
© All rights of this article and this BLOG reserved for RAJATkanti BERA. Unauthorized use or reproduction of any cause is strictly prohibited.
No comments:
Post a Comment